আপনি কি হৃদরোগে আক্রান্ত? জানতে পারবেন এই সহজ কিছু উপায়ে
হৃদরোগের কথা শুনলে আমার, আপনার সকলেরই কম্পন শুরু হয়ে যায়। কিন্তু জানেন কি বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে যা আপনাকে জানিয়ে দেবে আপনার হৃদয় কী কথা বলছে। চিকিৎসকরা বছরের পর বছর ধরে দেখে এসেছেন যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ধুমপান, কোলেস্টেরল জনিত সমস্যা আছে তাঁরাই হৃদরোগের শিকার হন। সম্প্রতি রিডার্স ডাইজেস্টে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আমরা যদি ৫ টি খুব সরল এবং ছোট পরীক্ষা করি তাহলেই বুঝতে পারবো আগামীদিনে আমাদের হৃৎপিণ্ড কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে কিনা। যাঁরা পরীক্ষায় ২০ বার খারাপ ফল করবে তাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা প্রবল। এবার দেখে নেওয়া যাক কী সেই ৫ পরীক্ষা
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম : এটি হৃৎপিন্ডের খুব সাধারণ পরীক্ষা, যার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের পেশীর বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করা হয় । ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে এই পরীক্ষা হয়ে যায়। পরীক্ষার সময়ে ব্যাথা বা যন্ত্রণার উদ্রেক হয় না।
কোনও ইসিজি চলাকালীন, আপনার ডাক্তার আপনার হাতে এবং বুকে 10 টি ছোট ইলেকট্রোড রাখবেন যা আপনার হৃদয়ের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করতে সাহায্য করবে, যদি সেই ক্রিয়াকলাপে কোনো ছন্দপতন হয় তখনই আপনার ডাক্তার আপনাকে সাবধান করে দেবেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ খাবার পরামর্শ দেবেন। নতুন কোনো হৃদরোগের কোনো সমস্যা নিয়ে এলে সর্বপ্রথম তাকে ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষা করা হয়।
করোনারি ক্যালসিয়াম স্ক্যান : যদি আপনার চিকিৎসকের সন্দেহ হয় যে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি থাকতে পারে তবে তারা করোনারি ক্যালসিয়াম স্ক্যান করতে পারেন । এই লো-রেডিয়েশনের সিটি স্ক্যানটি আপনার করোনারি ধমনীতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ নির্ধারণ করে। যখন করোনারিগুলিতে ক্যালসিয়াম দেখতে পাওয়া যায় , তার অর্থ এই যে রোগীর এথেরোস্ক্লেরোসিস রয়েছে। উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আক্রান্তদের আরও ঘন ঘন স্ক্যানের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।পুরুষ, বিশেষত ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের , করোনারিতে ক্যালসিয়াম জমার সম্ভাবনা বেশি।
সি-প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিনের জন্য রক্ত পরীক্ষা: হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত তিনটি রক্ত পরীক্ষার মধ্যে প্রথমটি আপনার রক্ত প্রবাহে সি-বিক্রিয়াশীল প্রোটিনের পরিমাণ বা সিআরপি পরিমাপ করে। দেহের ক্রমবর্ধমান প্রদাহের সঙ্গে সিআরপি বেড়ে ওঠে, যদিও প্রদাহের সঙ্গে হৃদরোগের সরাসরি সম্পর্ক আছে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি। একটি সিআরপি পরীক্ষা নির্দেশ করতে পারে যে হৃদরোগ শুরু হওয়ার আগে আপনাকে কী কী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকরা উদ্ভিজ ডায়েট খাওয়ার, অনুশীলন করার, চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার এবং হেসে খেলে জীবন কাটানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন । জীবন যদি সুখকর হয় তাহলে কী হৃদয় দুঃখী থাকতে পারে?
এনটি-প্রোবিএনপি রক্ত পরীক্ষা: আপনার কার্ডিওলজিস্ট এনটি-প্রোবিএনপি নামে পরিচিত একটি রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন । কার্ডিওভাসকুলার স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আপনার মস্তিক এবং হৃৎপিণ্ড একটি হরমোন নিঃসরণ করে। যার নাম নাট্রিউরেটিক পেপটিড।বিএনপির উচ্চ মাত্রার এলে বুঝতে হবে , আপনার হার্টের পেশী শক্ত হয়ে গেছে এবং একবারে তা শিথিল হতে পারে না। নিয়মিত ক্রিয়াকলাপের মধ্যে না থাকলে এই সমস্যা হতে পারে ।কিছু সাধারণ জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি আপনার হৃদয়ে যে পরিমাণ চাপ তৈরি করেন তা হ্রাস করতে পারেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে, নিয়মিত কাজ করা এবং ধূমপান ত্যাগ করার মাধ্যমে ।
ট্রোপোনিন টি – একটি উচ্চ সংবেদনশীল রক্ত পরীক্ষা : হৃদরোগের ঝুঁকির মূল্যায়ন করতে গবেষণায় উল্লিখিতসর্বশেষ পরীক্ষাটি হ’ল একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল রক্ত পরীক্ষা যা আপনার হার্টের ট্রোপোনিন টি নামে পরিচিত প্রোটিনের মাত্রা পরিমাপ করে।যখন আপনার হৃৎপিন্ডটি খুব বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন এই প্রোটিন নিঃসরণ হয়, যা দেখে চিকিৎসকরা বুঝে যান হৃদরোগের কোন স্টেজ চলছে। হটাৎ করে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের ওপর সাংঘাতিক চাপ পড়ে , সেই সময় ট্রোপোনিনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন চিকিৎসকরা। ট্রোুপোনিনের মাত্রা পরীক্ষা করে অনেকসময় হার্টের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি সারিয়ে ফেলতে পারেন চিকিৎসকেরা, যার ফলে স্ট্রোকের মতো সমস্যা এড়ানো যায়। সবশেষে বলতে হয় হৃদয়ের কথা শুনুন, হৃদয়ও আপনার কথা শুনবে।