‘আমি মেঝেতে উনার পায়ের কাছেই বসেছিলাম’ : আঁখি আলমগীর
অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। ২৭ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর আজ রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
২০১৭ সালে সংগীতের নক্ষত্র এই গায়িকার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গায়িকা আঁখি আলমগীর। তার বাড়িতে সেদিন ৩০ মিনিটের জন্য গিয়ে আড়াই ঘণ্টা গল্প করার, তার সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হয়েছে আঁখির। সুযোগটা আঁখি পেয়েছিলেন উপমহাদেশের আরেক জনপ্রিয় গায়িকা রুনা লায়লার মাধ্যমে।
আঁখি বলেন, ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রের গান রেকর্ডিং এর জন্য আমরা ভারতে গিয়েছিলাম। রেকর্ডিং এর আগে আগে সুযোগটা হয়েছিল, আর সেটা করে দিয়েছিলেন রুনা আন্টি। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ২৬ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় একটি শো ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি। কারণ দেখা করার তারিখ ছিলো ২৭ মার্চ। শো করে ইন্ডিয়া এসে দেখা করা কঠিন। তাই শো ছেড়ে দিয়ে ভারতে চলে যাই। লতাজীর সাথে দেখা করার আগের রাতে ঘুমাতে পারেননি তিনি।’
এই গায়িকার ভাষ্য, ‘আমি যে লতাজীর কি পরিমাণ ভক্ত সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ছোটবেলায় উনার গান ক্যাসেট প্লেয়ার ও রেডিওতে শুনে শুনে মুখস্ত করে ফেলতাম। অনেকেই হয়ত তার ভক্ত কিন্তু আমার মতো এতটা কাছে যাওয়ার সুযোগ কয়জন পায়! আমি সেই সুযোগটা পেয়ে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘লতাজী আমাদের সময় দিয়েছিলেন ২৭ মার্চ বিকেল ৪টায়। কথা ছিল ৩০ মিনিট সময় দেবেন আমাদের। কিন্তু তিনি আমাদের অবাক করে দিয়ে আড়াই ঘণ্টা সময় দিলেন। বলা যায় এই সময়টা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলোর একটি।’
আঁখি বলেন, ‘আমাকে উনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রুনা আন্টি। এরপর পুরোটা সময় আমি তার হাত ধরে পায়ের কাছে বসেছিলাম। যদিও লতাজী বারবার আমাকে উনার পাশে সোফায় বসাতে চাইছিলেন, কিন্তু আমি মেঝেতে উনার পায়ের কাছেই বসেছিলাম। আমি আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না সেই দিনের অনুভূতি।’
এই গায়িকার ভাষ্য, ‘আসার সময় আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন লতাজী। তখন আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল। ওই সময় আশেপাশে আরও অনেকেই ছিল। বার বার বলছিলাম, আমি খুব সরি। ক্ষমা করবেন। তারা বলেছিল, আপনার ভালোবাসায় আমাদের ঘর ভরে গেছে।’
উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় গত ১১ জানুয়ারি লতাকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি। প্রথম থেকেই তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি শিল্পীর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু বয়সজনিত নানা সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত আর লড়তে পারলেন না। লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।