Uncategorized

সাবধান! ৮০ গুণ দ্রুত গতিতে গলছে এভারেস্টের হিমবাহ, হুমকির মুখে ১৬০ কোটি মানুষ

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের হিমবাহ ‘মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের’ কারণে গলে যাচ্ছে। যতটা সময় নিয়ে হিমবাহ তৈরি হয়, তার চেয়ে ৮০ গুণ দ্রুততার সঙ্গে এটি গলছে। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু এলাকাতেও পৌঁছে গেছে বলে একটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে।

বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী নেচার পোর্টফোলিও জার্নাল ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক সায়েন্সে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে গবেষকেরা দাবি করেছেন, এভারেস্ট চূড়ায় এভাবে হিমবাহ গলে যাওয়া বড় ধরনের বিপর্যয়ের সংকেত। বিশ্বের ১৬০ কোটি মানুষের খাবার জল, সেচের জল, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের স্রোত- সব ওই হিমবাহ গলা জল থেকেই আসে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সাউথ কোল হিমবাহে যে বরফ জমাট বাধতে দুই হাজার বছর সময় লেগেছে, তা মাত্র ২৫ বছরে গলে গেছে। যার অর্থ হল, জমাট বাধার তুলনায় ৮০ গুন দ্রুত গলেছে বরফ।

গুরুত্বপূর্ণ এই গবেষণাটি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেইনের একদল বিজ্ঞানী ও পর্বতারোহীর তত্ত্বাবধানে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও রোলেক্স পারপেচুয়াল প্ল্যানেট এভারেস্ট এক্সপেডিশন নামে ২০১৯ সালে এভারেস্টে একটি অভিযান চালানো হয়। বিজ্ঞানী ও পর্বতারোহীরা এভারেস্টের হিমবাহে ভ্রমণ করেন এবং সেখানকার নমুনা সংগ্রহ করেন। তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশনও প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের গবেষণার পরই এভারেস্টের হিমবাহ উদ্বেগজনক হারে গলে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেল।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এভারেস্টের হিমবাহ তুষার দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। এই হিমবাহ গঠিত হতে লাগে কয়েক দশক। কিন্তু বরফ আলগা হয়ে পড়ায় সেই হিমবাহ প্রতিবছর গলছে অতি দ্রুত হারে।

গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী ইউনিভার্সিটি অব মেইনের ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক পল মায়েস্কি বলেন, এভারেস্টের সর্বোচ্চ হিমবাহটি এর ভারসাম্য রক্ষায় রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করে। এখন দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর ছাদেও মনুষ্যসৃষ্ট উষ্ণতার প্রভাব পড়েছে।

গবেষণাটি ২৬ হাজার ৩০০ ফুটের বেশি উঁচু হিমবাহের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। গবেষণায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সারা বিশ্বের জনজীবনের ওপর প্রভাবের বিষয়টি নতুন করে আলোকপাত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯০-এর দশক থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ হিমবাহের ওপর মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। এর ফলে তুষারধসের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। প্রতিবছর প্রায় ৮০০ পর্বতারোহীর এভারেস্টে ওঠার বিষয়টিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

এদিকে হিমবাহ ধসে পড়লে এশিয়ায় শত কোটিরও বেশি মানুষের সুপেয় জল, খাবার ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। কারণ, হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীর ওপর তাদের জীবন নির্ভরশীল।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর অন্যান্য উঁচু পর্বতের হিমবাহের অবস্থা কী হতে পারে বা হচ্ছে, সেই বিষয়টিকে ইঙ্গিত করছে মাউন্ট এভারেস্টের হিমবাহের ওই গবেষণার ফল।

অধ্যাপক মায়েস্কি বলেন, তার আন্তর্জাতিক দলটি সাউথ কোল গ্লেসিয়ার নিয়ে কাজ করেছে। এই হিমবাহটির অবস্থান মাউন্ট এভারেস্ট ও লোটসের (চতুর্থ সর্বোচ্চ পর্বতমালা) মাঝখানে। দলটি এই হিমবাহটি কতটা সময় ও কী কারণে গলে গেছে, তা নিয়ে কাজ করে।

সূত্র: বিবিসি

Back to top button