OMG! ২৫ বছরের কাজ ২৪ ঘণ্টায় করে দিবে এই নতুন সুপার কম্পিউটার, জেনেনিন বিশেষ ফিচার সম্পর্কে
করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের উৎপত্তির রহস্য উন্মোচন- বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব গবেষণায় ব্যবহৃত এই যন্ত্রের নাম সুপার কম্পিউটার। এসব কম্পিউটার সেকেন্ডে কোয়াড্রিলিয়ন (একের পর ১৫টি শূন্যযুক্ত সংখ্যা) গণনা করতে সক্ষম। বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্বে কে কার থেকে এগিয়ে থাকবে তা নির্ধারণ করছে এই সুপার কম্পিউটার।
সুপার কম্পিউটার নিয়ে বিশ্বব্যাপী এই প্রতিযোগিতার তালিকায় এবার নাম লেখাল আন্দালুসিয়ায় ইউনিভার্সিটি অব গ্রানাডা। স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি গত মঙ্গলবার আলাবাইসিন নামের নতুন একটি সুপার কম্পিউটার উদ্বোধন করে। কম্পিউটারটির প্রসেসিং ক্ষমতা ৮২২ টেরাফ্লপ। সেকেন্ডে এক ট্রিলিয়ন হিসাব সম্পন্ন করার ক্ষমতাকে এক টেরাফ্লপ বলে।
গবেষণা পরিচালনা করতে বর্তমানে দ্রুত গতির শক্তিশালী প্রসেসিং ক্ষমতাসম্পন্ন সুপার কম্পিউটারের বিকল্প নেই। সাধারণ কম্পিউটার দিয়ে এ কাজ সম্ভব নয়। একইসঙ্গে কয়েক লক্ষ প্রসেসরের সমন্বয়ে অপটিক্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের মধ্য দিয়ে নিমেষেই জটিল সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান দিতে পারে এসব কম্পিউটার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিলার আরান্দা বলেন, আন্দালুসিয়ায় ইউনিভার্সিটি অব গ্রানাডা ছাড়াও অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৫টি রিসার্চ গ্রুপ এবং ৫০০ জন বিজ্ঞানী এই সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন।
নতুন এই সুপার কম্পিউটার নির্মাণে ব্যয়িত হয়েছে ১.৩৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ। আলবাইসিন শুধু গবেষণার সময়ই কমাবে না এর পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি অব গ্রানাডার বাইরে গবেষণা কর্ম সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে।
“আগে আমাদের পক্ষে যেসব কাজ করা অসম্ভব ছিল, এখন সেগুলো সম্ভব হবে,” বলেন আরান্দা। “শুধু গ্রানাডা ইউনিভার্সিটিই নয়, আন্দালুসিয়ান অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও কম্পিউটারটি ব্যবহার করবে। সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের মাধ্যমে আমরা উদাহরণ তৈরি করতে চাই,” বলেন তিনি
তবে আলবাইসিন গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সুপারকম্পিউটার নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা ও কম্পিউটার টেকনোলজির অধ্যাপক বেগোনা দেল পিনো প্রিয়েতো বলেন, “গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয় আরও ৩০ বছর আগে সুপারকম্পিউটিংয়ের জগতে প্রবেশ করে।”
আলবাইসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সুপার কম্পিউটার। তবে প্রথম প্রকল্পটির চেয়ে বহুগুণে এগিয়ে রয়েছে আলবাইসিন। ২০০৭ সালে নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সুপার কম্পিউটারের চেয়ে আলবাইসিন ২০০ গুণ দ্রুতগতি সম্পন্ন। ২০১৩ সালে উদ্ভাবিত দ্বিতীয় সুপার কম্পিউটারটির চেয়ে এর দ্রুততা ২০ গুণ বেশি।
“আলবাইসিনের প্রসেসিং ক্ষমতার ব্যাখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেম ইনভেস্টিগেশন এবং সুপারকম্পিউটিং বিভাগের প্রধান জিসাস রদ্রিগেজ পুগা বলেন, “২৫ বছর সময় লাগবে এমন জটিল বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এই কম্পিউটার মাত্র ২৪ ঘণ্টায় করে দিতে সক্ষম।”
গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকুলার অ্যান্ড নিউক্লিয়ার অ্যাটমিক ফিজিক্সের গবেষক ব্লাঙ্কা বিয়েল বলেন, ন্যানোটেকনোলজি নিয়ে তার গবেষণায় নতুন এই সুপারকম্পিউটার ভীষণ কাজে দিবে।
“ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্রে জটিল সব ক্যালকুলেশনের প্রয়োজন হয়, যা কেবল শক্তিশালী কম্পিউটারে করা সম্ভব। এখন পর্যন্ত এ ধরনের কাজ করতে তিন থেকে চার সপ্তাহ লাগে।। আলবাইসিনের সাহায্যে তা এক দিনেরও কম সময়ে করা সম্ভব হবে,” বলেন তিনি
বেগোনা দেল পিনো বলেন, “সুপারকম্পিউটিংয়ের সিদ্ধান্ত গবেষণা, উদ্ভাবন, উঁচুস্তরের জ্ঞান আদান-প্রদান এবং বিশেষায়িত ট্রেইনিংয়ের বিকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কৌশলগত উদ্যোগ।”
রিসার্চ অ্যান্ড ট্রান্সফারের ডেপুটি রেক্টর এবং কম্পিউটিং গবেষণায় বহুলভাবে উদ্ধৃত এনরিক হেরেরা বলেন, “শক্তিশালী কম্পিউটিং ক্ষমতা এবং উচ্চমাত্রার প্রসেসিং ও জটিল সিমুলেশন ছাড়া উঁচুমানের গবেষণা আর সম্ভব নয়।”
হেরেরার বিশ্বাস নতুন এই সুপার কম্পিউটার গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিবে। স্পেনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আলবেইসিনের সাহায্যে গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জাতীয় পর্যায়ের গবেষণাই নয়, অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজেও কম্পিউটারটির ব্যবহার সম্প্রসারণ করতে ইচ্ছুক।