বিশেষ: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান ও ভূমিকা
1897 খ্রিস্টাব্দের 23 শে জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসু কটকে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জানকীনাথ বসু ও মা প্রভাবতী দেবী । 1913 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কটকের রভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে পড়েন । 1916 খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তাঁকে বিতারিত করা হয় । 1917 খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন । 1920 খ্রিস্টাব্দে আইসিএস (ICS) পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান পান ।
1921 খ্রিস্টাব্দে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেন্টাল মোরাল সায়েন্সে ট্রাইপস পরীক্ষা পাস করে দেশে ফেরেন । তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আহবানে জাতীয় আন্দোলনে যোগ দিয়ে ন্যাশনাল কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন । তিনি ‘ স্বরাজ ‘ নামে একটি ইংরাজি পত্রিকা বের করেন । চিত্তরঞ্জন দাস তাঁকে বাংলা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রধান দায়িত্ব বসান । 1924 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি মুখ্য কার্য নির্বাহী অফিসার হন । কলকাতা মিউনিসিপাল গেজেট নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন । 1924 খ্রিস্টাব্দের তাঁকে বন্দী করে রেঙ্গুনে পাঠানো হয় । হাজার 1929 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সমিতি থেকে তাকে ও শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার-কে বহিষ্কার করা হয় ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান ও ভূমিকা :-
1930 খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন । 1931 খ্রিস্টাব্দে তিনি AITUC- এর সভাপতি হন । জামশেদপুরের টিস্কোর লেবার অ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি নির্বাচিত হন । জেলে বন্দী অবস্থায় তিনি কলকাতার মেয়র হন । 1933 খ্রিস্টাব্দের মার্চে তিনি ভিয়েনা যান। তিনি অস্ট্রিয়া ইন্ডিয়া সোসাইটি স্থাপন করেন । 1935 খ্রিস্টাব্দে তিনি ” ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল ” নামে গ্রন্থটি লেখেন । 1936 খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে ফেরেন ।
1937 খ্রিষ্টাব্দে তাকে শর্তাধীন মুক্তি দেওয়া হয় । 1938 খ্রিস্টাব্দে তিনি হরিপুরা কংগ্রেসের সভাপতি হন । 1938 খ্রিস্টাব্দে তিনি ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন ও জহরলাল নেহেরু কে প্ল্যানিং কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন ।
ফরওয়ার্ড ব্লক : –
1939 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র দ্বিতীয়বার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হতে চাইলে গান্ধীজী পট্টভি সীতারামাইয়াকে প্রার্থী করেন । কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে সুভাষচন্দ্র 1850 টি ও সীতারামাইয়া 1377 টি ভোট পায় । নেতাজি জয় লাভ করেন 203 ভোটে। 1939 খ্রিস্টাব্দে 3 মে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ” ফরওয়ার্ড ব্লক ” নামে একটি নতুন দল গঠন করেন, সুভাষচন্দ্র বসু সভাপতি ও সর্দার শার্দুল সিং সহ সভাপতি হন । এছাড়া অন্যান্যরা ছিলেন বিহারের সহজানন্দ ও বোম্বাইয়ের নরিম্যান । নেতাজির লেখা একটি গ্রন্থ হল ” তরুনের স্বপ্ন ” ।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দবাহিনী
1940 খ্রিস্টাব্দের 2 জুলাই সুভাষচন্দ্র বসু কে বন্দি করা হয় ।2 ডিসেম্বর অসুস্থতার জন্য কলকাতায় এলগিন রোডে নিজ গৃহে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয় । 1941 খ্রিস্টাব্দের 17 জানুয়ারি তিনি কলকাতা ত্যাগ করেন । জিয়াউদ্দিন ছদ্মনামে তার ভাইপো শিশির বসুর সঙ্গে । বিহারের গোমো স্টেশন থেকে তিনি পেশোয়ার যান । আফগানিস্তান হয়ে রাশিয়া রান। 1941 খ্রিস্টাব্দের 24 মার্চ তিনি জার্মানিতে হাজির হন । তিনি হিটলার ও মুসোলিনির সঙ্গে দেখা করেন । 1942 খ্রিস্টাব্দে বার্লিনে আজাদ হিন্দুস্তান বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেন ।
1942 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে জার্মানীর হাতে বন্দী 400 ভারতীয় সেনা নিয়ে তিনি একটি সেনাদল গঠন করেন । জার্মানিতে বন্দি সেনাদল তাকে প্রথম “নেতাজি” আখ্যায় ভূষিত করেন। 1942 খ্রিস্টাব্দে 15 জুলাই ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি গঠিত হয় প্রায় 40,000 ভারতীয়দের নিয়ে পাঞ্জাবের 14 নং রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন মোহন সিং এই বাহিনী গড়ে তোলেন । 1942 খ্রিস্টাব্দে জুন মাসে রাজবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ গঠন করেন জাপানে এবং সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন 1942 খ্রিস্টাব্দের 1 লা সেপ্টেম্বর । 1943 খ্রিস্টাব্দে মোহন সিং ও নিরঞ্জন সিং গিল কে বন্দি করা হয় ।
1943 খ্রিস্টাব্দের 13 জুন ডুবোজাহাজে করে সঙ্গী হবিবুর রহমানের সঙ্গে নেতাজি জার্মানি থেকে জাপানের টোকিওতে আসেন । জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো তাঁকে অভ্যর্থনা জানান । 1943 খ্রিস্টাব্দের 2 জুলাই নেতাজি সিঙ্গাপুরে পৌঁছান, 4 জুলাই রাজবিহারী বসু নেতাজির হাতে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ এর দায়িত্ব দেন । 1943 খ্রিস্টাব্দের 25 আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে নেতাজির আজাদ হিন্দবাহিনীর নেতৃত্ব দেন । 5 ই জুলাই তিনি ” দিল্লি চলো ডাক ” দেন । আজাদ হিন্দবাহিনীতে গান্ধী ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড এবং নেহেরু ব্রিগেড ছিল । বালক-বালিকাদের নিয়ে গঠিত ছিল বাল সেনাদল । ঝাঁসির রানী ব্রিগেডের নেত্রী ছিলেন শ্রীমতি লক্ষ্মী স্বামীনাথন । বাছা-বাছা সেনা নিয়ে গঠিত হয় সুভাষ ব্রিগেড । এই ব্রিগেডের নেতৃত্ব ছিলেন শাহনাজ খান ।
1943 খ্রিস্টাব্দের 21 অক্টোবর নেতাজি সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন । 23 শে অক্টোবর আজাদ হিন্দ সরকার ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । জাপান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি প্রভৃতি 7 টি দেশ দিয়ে এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয় । 6 নভেম্বর তোজো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দুটি আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে তুলে দেন । 31 ডিসেম্বর নেতাজি এই দুটি দ্বীপপুঞ্জের নাম রাখেন ” শহীদ ও স্বরাজ ” দ্বীপ ।
1944 খ্রিস্টাব্দের 4 জানুয়ারি নেতাজি রেঙ্গুন এ প্রধান সামরিক দপ্তর স্থাপন করেন । আজাদ হিন্দ সরকার এর মূলধনী ছিল ” জয়হিন্দ দিল্ল চলো ” । 1944 খ্রিস্টাব্দে যে মাসে আজাদ হিন্দবাহিনী কোহিমা দখল করে । 1944 খ্রিস্টাব্দে মওডকে ভারতীয় ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করা হয় ভারতের মাটিতে । 1945 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট জাপান মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। রটনা করা হয় যে 1945 খ্রিস্টাব্দের 18 আগস্ট তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে ।