ভাইকে বাঁচাতেই জন্ম নিলো বোন, কঠিন অসুখ থেকে বেঁচে গেলো ভাই
আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে মানব ভ্রূণের গবেষণার বিষয়ে বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে অনেকটাই। আর এবার সেই উন্নতির ধারা বজায় রেখেই এবার ভারতে প্রথমবারের মতো একটি শিশুর জন্ম দেওয়া হয়েছে। আর জানলে অবাক হবেন যে নতুন শিশুটির জন্ম দেওয়া হয়েছে তার ভাই কে বাঁচানোর জন্য। তবে কাউকে বাঁচানোর জন্য জিনগত ত্রুটি সংশোধন করা কতটা যুক্তি পূর্ণ তা নিয়ে উঠেছে নৈতিকতার প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে জন্ম হয় কাভ্যিয়া সোলাঙ্কি। আর এই বছরের মার্চ মাসে তার দেহ থেকে অস্থি মজ্জা সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপন করা হয় তার বড় দাদা অভিজিতের দেহে। কারণ অভিজিৎ দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিল থ্যালাসেমিয়া তে আর কোনো ব্যক্তি বা শিশু যদি এই রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তার শরীরে দেখা যায় হিমোগ্লোবিন কণার ঘাটতি। আর সেই কারণেই আক্রান্ত রোগীকে ২০-২২ দিন অন্তর রক্ত দেওয়া প্রয়োজন হয়ে পরে। জানা গেছে দাদা অভিজিৎকে ৬ বছর বয়সের মধ্যে মোট ৮০ বার রক্ত দিতে হয়েছে।
আর এই প্রসঙ্গে অভিজিতের বাবা সাহদেভসিন সোলাঙ্কি বলেন, ‘আমার বড় কন্যার পর অভিজিতের জন্ম হয়। আমরা খুব সুখী একটা পরিবার ছিলাম। তার বয়স যখন মাত্র ১০ মাস তখন আমরা জানতে পারলাম যে সে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। আমরা সবাই ভেঙে পড়লাম। সে খুব দুর্বল ছিল। তার রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ঠিক মতো কাজ করতো না এবং এর ফলে সে প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ত। আর যখন আমি জানতে পারলাম যে এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, তখন আমার কষ্ট দ্বিগুণ হয়ে গেল।’
আর এরপরেই তিনি এই অসুখ নিয়ে গবেষণা ও খোঁজের পর জানতে পারেন এই নরোগের একটি মিচিকিৎসা আছে তা হলো আক্রান্ত রোগীর শরীরে অস্থি মজ্জা সংস্থাপন। আর তারপরেই তিনি এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু শেষে দেখা যায় তাদের পরিবারের কারোর সাথেই অভিজিতের অস্থি মজ্জা মিলছে না। এরপর ২০১৭ সালে একটি প্রতিবেদনে জানতে পারেন যে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে একই রকম অস্থি মজ্জা সম্বলিত নতুন শিশুর জন্ম দেওয়া সম্ভব আর এই ধরণের শিশুদের ‘জীবন রক্ষাকারী ভাই বোন’ বলা হয়। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ভ্রূণের মধ্যে আগে থেকেই শরীরে অঙ্গ, কোষ বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য উপযোগী করে তোলা হয় শেষে নতুন শিশুটি জন্মালে থ্যালাসেমিয়ার আক্রান্ত শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত বয়স হওয়ার পর প্রতিস্থাপন করা যায়। আর তাদের পরিচয় হয়ে ওঠে জীবন রক্ষাকারী ভাই বোন।