সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের অভিভাবক হওয়ার প্রবণতা সারা বিশ্বে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সারগেসি শব্দের একেবারে সোজাসাপ্টা অর্থ হল গর্ভাশয় ভাড়া করা। একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতিকে সারোগেসি বলে। এই পদ্ধতিতে স্ত্রী ও পুরুষের ডিম্বাণু ও শুক্রাণু দেহের বাইরে নিষিক্ত করে তা অন্য নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।
অনেক চেষ্টার পরেও যখন সন্তান লাভের আর কোনো আশা থাকে না, তখনই কোনো দম্পতি সারোগেসির শরণাপন্ন হতে পারেন। এছাড়া সারোগেসির পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন- বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও গর্ভপাত হয়ে যাওয়া। অসময়ে নারীর মেনোপজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। চিকিৎসার মাধ্যমেও গর্ভধারণ না হওয়া। জরায়ুতে অস্বাভাবিকতা দেখা যাওয়া কিংবা কোনো অস্ত্রোপচারের জন্য জরায়ু যদি বাদ পড়ে যায়।
এসব কারণের যেকোনো একটি কারণ দেখা দিলেই দম্পত্তি সারোগেসির শরণাপন্ন হতে পারেন। এছাড়া আরও কয়েকটি কারণেও মানুষ সারোগেট বেবি নিয়ে থাকেন। যেমন- সন্তান ধারনের কষ্ট সহ্য না করার ইচ্ছা, ব্যস্ততার কারণে বা শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে, বিয়ে না করে সিংগেল ফাদার বা মাদার হওয়ার ইচ্ছা।
এধরনের সারগেট বেবি নেওয়ার প্রবণতা ভারতে খুব জনপ্রিয় ছিল। যেমন শাহরুখ খান, আমির খানের একাধিক সন্তান থাকার পরেও সারোগেট বেবি নিয়েছেন। এদিকে আবার বিয়ে না করেই পরিচালক-প্রযোজক করণ জোহার, অভিনেতা তুষার কাপুড়, তার বোন একতা কাপুড় এবং আরও অনেকেই সারোগেট বেবি নিয়েছেন।
সেই তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নাম। এই অভিনেত্রী শুক্রবার মধ্যরাতে জানিয়েছেন, যে তিনি মা হয়েছেন। বাবা হয়েছেন তার স্বামী নিক জোনাস। এও জানিয়েছেন, তারা সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করে সন্তানের অভিভাবক হয়েছেন।
সারোগেসি সাধারণত দুই রকমের হয়। একটি হচ্ছে পার্শিয়াল সারোগেসি এবং আরেকটি ট্রু সারোগেসি। পার্শিয়াল সারোগেসি অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। সন্তানধারণে এখানে মা কোনো ভূমিকাই পালন করেন না। বাবার শুক্রাণু আর সারোগেট মায়ের ডিম্বানু থেকে জন্ম হয় শিশুর।
অন্যদিকে, ট্রু সারোগেসিতে মায়ের ডিম্বাণু এবং বাবার শুক্রাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। এরপর সেই এম্ব্রায়ো বা ভ্রূণ সারোগেট মায়ের ইউটিরেস বা জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। বর্তমানে সারোগেসির এই পদ্ধতিটি বেশিরভাগ দম্পতি গ্রহণ করেন।
পার্শিয়াল সারোগেসির ক্ষেত্রে সাধারণত সারোগেট মাদারের ডিম্বাণু এবং গর্ভ ভাড়া নেওয়া হয়। এর ফলে এই পদ্ধতিতে সারোগেসির ক্ষেত্রে সন্তানের ওপর সারোগেট মাদারের একটি জৈবিক অধিকার থেকেই যায়। তবে ট্রু সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করলে দম্পতির পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নিয়ে কোনো সংশয় থাকে না। কারণ এই পদ্ধতিতে মায়ের শুক্রাণুর সঙ্গে স্পার্ম ব্যাংকের অন্য পুরুষের শুক্রাণু কিম্বা বাবার শুক্রাণু অন্য মহিলার ডিম্বানুর সঙ্গে নিষিক্ত করে ভ্রূণ তৈরি করা হয়।
অন্য আরেকটি সারোগেসি হল কমার্শিয়াল সারোগেসি। এ পদ্ধতিতে একটা নিদৃষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে একজন মা তার নিজের গর্ভে অন্য একজনের সন্তান ধারন করেন। এ ক্ষেত্রে সারোগেট মাদার পান অর্থ এবং ইন্টেনডেড প্যারেন্টস্ পান সন্তান।
২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভারত ছিল কমার্শিয়াল সারোগেসির হটস্পট। সারোগেছি বিল ২০১৬ পাস হওয়ার পর বাণিজ্যিক সারোগেসি নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তবে আলটুরিস্টিক সারোগেছি চালু আছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক সারোগেসি প্রচলিত আছে। আবার অনেক দেশে এটা অবৈধ।
কোনো কোনো দেশের আইনে সারোগাসি বৈধ, আবার কোনো কোনো দেশে অবৈধ।