শুধু কেন্দ্র শাসনেই সন্তুষ্ট নয় মোদি সরকার। রাজ্য সরকারগুলির কার্যকলাপে হস্তক্ষেপের প্রবণতাও বাড়ছে। মুখে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে সমন্বয়ের বার্তা দিলেও নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের সরকারের বিরুদ্ধে বারংবার অবিজেপি রাজ্যের এক্তিয়ারে নাক গলানোর অভিযোগ উঠছে। সেই অঙ্কেই এবার তাদের অস্ত্র রাজ্যপালরা। পরিণতি? রাজ্যপাল-সরকার সংঘাত। মূলত অবিজেপি রাজ্যে। মতান্তর ও বিবাদ তুঙ্গে ওঠায় সৃষ্টি হচ্ছে প্রশাসনিক সঙ্কট। আটকে যাচ্ছে সরকারি সিদ্ধান্ত পরিচালন প্রক্রিয়াও। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কেরল, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র কিংবা ওড়িশা—পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালিকা। মমতার ধাঁচে ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবিকে সরাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন সে রাজ্যের ডিএমকে সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। সেই ক্ষোভ আছড়ে পড়ল সংসদে। শুক্রবার সংসদের দুই কক্ষেই রাজ্যপাল ইস্যুতে সম্মিলিত প্রতিবাদ করল বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠল কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে।
সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকার (নিট) আওতা থেকে রাজ্যকে বাদ দিতে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে বিধানসভায় বিল এনেছে তামিলনাড়ু সরকার। সেই বিল আটকে দিয়েছেন রাজ্যপাল আর এন রবি। বলেছেন, সই করব না। এরপরই বিরোধ তীব্র হয়েছে। রাজ্যপালের মনোভাবের বিরুদ্ধে এদিন লোকসভায় মুলতুবি প্রস্তাব জমা দেন তামিলনাড়ুর কংগ্রেস এমপি মণিক্কম ঠাকুর। রাজ্যসভায় জিরো আওয়ারে এই ইস্যুতে সরব হতে চেয়েছিলেন ডিএমকে সাংসদরা। কিন্তু চেয়্যারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু সম্মতি দেননি। ডিএমকে এবং তৃণমূল একজোট হয়ে রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করে। অর্থাৎ ছবিটা স্পষ্ট, রাজ্যপাল-সংঘাত ইস্যুতে সব বিরোধীরা এককাট্টা হচ্ছে। গত ২৬ জানুয়ারি এই ইস্যুকে সামনে রেখে জাতীয় স্তরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সর্বদলীয় বৈঠক হয়। হাজির ছিল একঝাঁক বিরোধী দল।
কংগ্রেসের এমপি মণিক্কম ঠাকুর বলেছেন, ‘রাজ্যপালকে দিয়ে বিরোধী শাসিত রাজ্যের অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ আসলে একটা প্যাটার্ন। এভাবে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে দিতে চাইছে মোদি সরকার। আসল লক্ষ্য হল, কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে রাজ্য চলুক।’ একই অভিযোগ তৃণমূল এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েনের। তাঁর মতে, রাজ্যপালের ভূমিকা এখন বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির কাজে বাধা দেওয়া। সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হচ্ছে রাজ্যপালের অধিকার এবং তাঁর হস্তক্ষেপের সাংবিধানিক সীমাকে।
কেরলের কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের সঙ্গে সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের চরম মতান্তর শুরু হয় গত বছর থেকেই। কেরলের সরকারের সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল। মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারের লাগাতার বিবাদ চলছে একের পর এক ইস্যুতে। একইসঙ্গে দেশের নানা প্রান্তে রাজ্য-রাজ্যপাল বিরোধ এরকম বেনজির। বিরোধী দল পরিচালিত রাজ্যগুলির সঙ্গে মোদি সরকারের এই নিরন্তর ছায়াযুদ্ধের প্রকৃত লক্ষ্য কী? প্রশ্ন উঠছে।