সাবধান! বাড়ছে শিশু কিশোরদের নেশা, ভারতে মোবাইল গেমিংয়ের বাজার হচ্ছে চাঙা
১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারত ঐতিহ্যগতভাবেই ক্রিকেট নিয়ে বেশ আবেগপ্রবণ। আর সেটাই স্মার্টফোন গেমিং তৈরিতে দেশীয় নির্মাতাদের জন্য বড় সুযোগ করে দিচ্ছে। যতই স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে ততই চাঙা হচ্ছে ভারতের মোবাইল গেমিং বাজার। অনলাইন গেমিংয়ের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে ভারতীয় স্পোর্টস গেম তৈরির কোম্পানিগুলো।
ফ্যান্টাসি গেমিং প্ল্যাটফর্ম ড্রিম ইলেভেন ভারতীয় একটি সংস্থা। ড্রিম ইলেভেন গেম ব্যবহারকারীরা প্রকৃত ক্রিকেট খেলোয়াড়দের রোস্টার বেছে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। অন্যান্য জনপ্রিয় খেলা যেমন ফুটবলে ক্রীড়াবিদ, প্রকৃত ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্সেরভিত্তিতে পয়েন্ট অর্জন করাসহ আছে খেলার সব খুঁটিনাটি বিষয়ও। একটি প্রতিযোগিতায় যোগদানের জন্য এক ডলারের কম খরচ হয় এবং বিশেষ করে ভালো খেলোয়াড়রা নগদ পুরস্কারও অর্জন করতে পারে।
ভারতের মহারাষ্ট্রের ২০ বছর বয়সী একজন বলেন, এটি এমন একটি খেলা যেখানে আপনার সব দক্ষতা, জ্ঞান এবং ভাগ্য কাজে লাগে। এটি একটি আসক্তিও বটে।
ড্রিমস ইলেভেনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ১৪ কোটি। ভারতের একমাত্র গেমিং সংস্থা হিসেবে ইউনিকর্ন ক্লাবে প্রবেশ করেছে এই ড্রিম ইলেভেন। ২০০৮ সালে ৭৩৬ কোটি টাকা মূল্যের ড্রিম ইলেভেন বাজারে আসে। হরিশ জৈন এবং ভাবিত শেঠের হাত ধরে পথ চলতে শুরু করা এই সংস্থাটিই ভারতের প্রথম অনলাইন ফ্যান্টাসি স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম।
জাপানের মতো অন্যান্য বাজারের বিপরীতে, যেখানে ভিডিও গেমিং কনসোলগুলোর রমরমা বাজার সেখানে মোবাইল গেমিংয়ে আধিপত্য বিস্তার করছে ভারত। আর এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে স্মার্টফোনের ব্যবহারের বিস্তার ঘটে যাওয়া।
বহুজাতিক রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৬ সালে টেলিকম ব্যবসায় প্রবেশ করার পর, পাঁচ বছরে ওয়্যারলেস ফি প্রায় ৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ফলে গ্রামাঞ্চলেও স্মার্টফোন ব্যবহার একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনা মহামারির কারণেও ভারতের গেমিং বাজার চাঙা হয়েছে। পরামর্শক সংস্থা রেডসিয়ারের মতে, ২০২০ সালে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের সময়ও গেম খেলার পেছনে বেশি সময় ব্যয় করেছেন অনেকে। দেখা গেছে, মহামারির আগের সপ্তাহে প্রায় ২ দশমিক ৫ ঘন্টা সময় ব্যয় করা হতো গেমিংয়ে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে তা বেড়ে ৩ দশমিক ৬ ঘন্টায় দাঁড়ায়। একই সময়ে গেম ডাউনলোড করাও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল।
বিনিয়োগকারীরা লক্ষ্য করেছেন যে, গত মাসে ভারতের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার মিলিয়ে গেম স্ট্রিমিং ও ই-স্পোর্টস প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে ২৫ মিলিয়ন ডলার।
বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ বলছে, গেমিং কোম্পানিগুলোর তহবিল ২০১৬ সালে ৩৪ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০২০ সালে ৪১২ মিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে।
গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নাজারা টেকনোলজিস গত মার্চে স্থানীয় মিডিয়ার মাধ্যমে প্রথম পাবলিক অফারিং সিস্টেম চালু করে। ভারতের ‘ওয়ারেন বাফেট’ হিসেবে পরিচিত রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা নাজারাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বোস্টন কনসাল্টিং বলছে, ২০২০ সালে ভারতের গেমিং কোম্পানি ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে চীনের গেমিং বাজার প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলারের। কিন্তু এটি দ্রুত বর্ধনশীল বলেও জানায় তারা।
ভারতের প্রবৃদ্ধি জাপানেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে গেম ডেভেলপমেন্টে রাজত্ব করেছে। ‘ফাইনাল ফ্যান্টাসি’ এবং ‘ড্রাগন কোয়েস্ট’ খ্যাত স্কয়ার এনিক্স হোল্ডিংস ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে ওই কোম্পানি ভারতে ফিরে আসে। এটি ‘লুডো জেনিথ’ নামে একটি গেম প্রকাশ করেছে। ভারতের ঐতিহ্যবাহি বোর্ড গেমের ওপর ভিত্তি করে জেটসিন্থেসিস নির্মাণ করেছে এটি।
স্কয়ার এনিক্স ইন্ডিয়ার পরিচালক রিওমা মাতসুই বলেন, ওয়্যারলেস ফি কমে যাওয়া এবং স্মার্টফোনের বিস্তার, একই সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বাজারের পরিবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
দিল্লি ও বেইজিংর মধ্যে মোবাইল গেমিং নিয়েও অসম প্রতিযোগিতা বাড়ছে। ২০২০ সালে ভারত সরকার চীনের ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকসহ বেশ কিছু অ্যাপস বন্ধ করে দেয়। জনপ্রিয় রয়্যাল গেম ‘প্লেয়ারআননোন ব্যাটেলগ্রাউন্ডস’ যেটি দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্রাফটন পার্টনারশিপের মাধ্যমে, চীনের টেনসেন্ট হোল্ডিংসের সঙ্গে বাজারে এনেছিল, সেটিও বন্ধ করা হয়।
ড্রিম স্পোর্টসে বিনিয়োগ করা কোম্পানির মধ্যে টেনসেন্টও একটি। কোম্পানির সিইও হর্ষ জৈন গত বছর একটি স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছিলেন চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আর কখনো অর্থ সংগ্রহ করতে চাইছে না তারা।
একজন বাজার বিশ্লেষক বলেন, চীনা কোম্পানিগুলোর বাজারে প্রবেশের অসুবিধার কারণে স্থানীয় ভারতীয় খেলোয়াড়দের জন্য আরও বেশি জায়গা তৈরি হচ্ছে।
ভারতের গেমিং বাজারের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। স্কয়ার এনিক্স-এর মাতসুই বলেছেন, সম্ভবত তারা কনসোল গেমের পর্বের মধ্য দিয়ে যেতে পারেনি। কনসোল গেম হলো একটি স্বতন্ত্র গেমিং ডিভাইস। এ ডিভাইসটি কম্পিউটার বা টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত করে উচ্চমানের রেজুলেশনের বিভিন্ন ভিডিও গেম খেলা যায়।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া