মাঝ আকাশে উড়ে যাওয়া একের পর এক বিমান থেকে আসতে শুরু করল অভিযোগ। কোনওটি মাটি থেকে প্রায় ৩৬ হাজার ফুট উপরে। কোনওটি প্রায় ৩৮ হাজার ফুট উপরে। প্রতিটি বিমানের পাইলটেরই অভিযোগ, আকাশের ওই উচ্চতায় তাঁরা আগুনের গোলা দেখতে পাচ্ছেন। কেউ জানিয়েছেন, প্রচণ্ড আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার সন্ধ্যায় একের পর এক বিমান থেকে এই অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসল কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। কী দেখে এমন অভিযোগ? প্রথমে একেবারেই অন্ধকারে ছিলেন এটিসি কর্তারা। তাদের দাবি, একটি বিমান থেকে এমন অভিযোগ এলে না হয় ভাবা যেত, যে পাইলট কোনও কারণে ভুল দেখেছেন। আকাশে ওই উচ্চতায় মাঝে মাঝে নাকি এমন চোখের ভুল হয়।
কিন্তু, যখন একের পর এক বিমান থেকে এই অভিযোগ আসতে শুরু করে, তখন সত্যিই চিন্তায় পড়ে যান এটিসি কর্তারা।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রথম খবরটা আসে সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ। কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে ইন্ডিগোর পাইলট ৩৮ হাজার ফুট থেকে জিজ্ঞাসা করেন, “সামনে কি অনেক ট্রাফিক (বিমান)? আমি সামনে খুব আলো দেখতে পাচ্ছি।” কলকাতা এটিসি মনিটরে দেখে, একটিমাত্র বিমান তখন দিল্লি থেকে কলকাতার দিকে আসছে। আর একটি বিমান সবে পটনা থেকে টেক-অফ করেছে। তারা চিন্তায় পড়ে যান। কী দেখে পাইলট এমন অভিযোগ করলেন?
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পর একের পর এক বিমান থেকে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ আসতে শুরু করে। বিমানচালকদের মধ্যে কেউ বলেন, আলোর ঝলকানিতে চোখ তার ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার বলেন, আগুনের গোলা দেখতে পাচ্ছি। জানা গিয়েছে, ঢাকা থেকে দুবাইয়ের পথে বাংলাদেশ বিমানের পাইলট ৩৬ হাজার ফুট উপর থেকে যখন অভিযোগ করেন, তখন তিনি জামশেদপুর ছাড়িয়ে জব্বলপুরের দিকে যাচ্ছেন।
ভুবনেশ্বর থেকে দিল্লি, কলকাতা মুম্বই, কলকাতা থেকে দিল্লি– প্রায় সবক’টি রুট থেকেই হয় আগুনের গোলা, নয় আলোর ঝলকানির অভিযোগ আসে বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর। মুম্বই থেকে স্পাইসজেটের বিমানের পাইলট জানান, তিনি আগুনের গোলা দেখতে পান পটনা থেকে কাঠমান্ডুর মধ্যের উড়ানপথে।
এটিসি সূত্রের খবর, পর পর বিমান থেকে অভিযোগ পেয়ে অফিসারেরা বিমানবাহিনী, ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের দাবি, ধুমকেতু, উল্কাপাত অথবা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা হলে তা আগে থেকে এটিসি-কে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, এ দিন সে রকম কোনও সতর্কবার্তা ছিল না। ফলে, তারা কার্যত বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। পরে এটিসি সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম আকাশে উল্কাপাতের কারণেই সব মিলিয়ে মোট ১১টি বিমানের পাইলট এই অভিযোগ করেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন জানান, এ দিন কোনও উল্কাবৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল না। এপ্রিলের মাঝামাঝি এমন একটি ঘটনা ঘটার কথা। তার পূর্বাভাসও রয়েছে বলে জানান তিনি। এ দিনের ঘটনা নিয়ে তিনি বাখ্যা দিয়েছেন, মাঝেমধ্যেই আচমকা বাইরে থেকে ধুলো বা কোনও ছোট পাথরের টুকরো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পরে বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে সেই ধুলো বা পাথরের টুকরোগুলি জ্বলে যায়। এ ক্ষেত্রেও তেমন হতে পারে। তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, এই ধরনের ঘটনার আগাম কোনও পূর্বাভাসও থাকে না।