RUSHvsUKR: সঙ্কটে ইউক্রেনের রাজধানী শহর কিয়েভ, শান্তি বৈঠক চাইছেন জেলেনস্কি
এক বার করে বিস্ফোরণের আওয়াজ। তার পরেই সাইরেন। মাটির তলায় বাঙ্কারে বসে শুধু প্রহর গুনছে অর্ধমৃত মানুষগুলো।
আর বাকি বিশ্ব আজ টিভির পর্দায় ক্ষণে ক্ষণে দেখে গিয়েছে ‘ব্রেকিং’। রাশিয়া আজ আরও বিধ্বংসী। সব দিক থেকে সাঁড়াশির মতো ইউক্রেনের টুঁটি চেপে ধরতে মরিয়া তাদের বাহিনী। খারকিভ, মারিয়ুপোল, সুমি-সহ বিভিন্ন প্রান্তে নাগাড়ে চলেছে গোলাবর্ষণ। মারিয়ুপোলের একটি মসজিদে আজ বোমা ফেলেছে তারা। আশির বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে। তাঁদের কথা জানা নেই। অপহরণ করা হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের মেলিটোপোল শহরের মেয়রকে। সব চেয়ে উত্তপ্ত রাজধানী কিভ। শোনা যাচ্ছে, আর মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার সুবিশাল কনভয়। হাওয়ায় উড়ছে আতঙ্ক, আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই না কিভের পতন হয়! এই অবস্থায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, জেরুসালেমে শান্তি বৈঠকের আয়োজন করার জন্য ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটকে অনুরোধ করেছেন তিনি।
গত কাল বেশ রাতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আচমকাই ঘোষণা করেন, ‘‘সব কিছু পরিকল্পনা মতো এগোচ্ছে। এ সপ্তাহে দিনের দিন খবর পেয়ে যাবেন।’’ আজ ভোর হতেই খবর মিলল, কিভের প্রায় দোরগোড়ায় রুশ বাহিনী। দিন সাতেক আগে থেকেই শোনা গিয়েছিল, কিভের বাইরে জড়ো হয়েছে রাশিয়ার ৬৪ কিলোমিটার সুদীর্ঘ সশস্ত্র সেনা কনভয়। তারা ক্রমশই আড়েবহরে বেড়েছে। ঠিক কী ছক কষছে রাশিয়া, তা নিয়ে ক্রমেই জল্পনা ছড়িয়েছে। ধীর গতিতে এক-একটি অঞ্চল দখল করতে-করতে এগিয়েছে এই বাহিনী। দখল করা অংশগুলোতে মোতায়েন করেছে তাদের ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধাস্ত্র। আজ শুরু হয়েছে দু’পক্ষের সম্মুখ সমর। স্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলোর দাবি, যুদ্ধ এমনই ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে যে, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা মৃতদেহ তুলে নিয়ে গিয়ে কবর দেওয়ার জন্য কেউ নেই!
প্রায় দূর্গের চেহারা নিয়েছে কিভ। তবে দুর্ভেদ্য নেই। রাজধানীকে ঘিরে ফেলেছে রুশ বাহিনী। এখন শুধু চূড়ান্ত আক্রমণের নির্দেশের অপেক্ষা। কিভের শহরতলিতে আজ লাগাতার হামলা চলেছে। শহরের দক্ষিণপশ্চিমে ভেসেলকিভে আজ দু’বার দুই আকাশছোঁয়া ধোঁয়ার স্তম্ভ তৈরি হয়। আর তার পরেই নাগাড়ে বিস্ফোরণের আওয়াজ। সূত্রের খবর, ওই অঞ্চলে ইউক্রেনের অস্ত্র মজুত ছিল। অস্ত্রাগারে হামলা করে রাশিয়া। তার জেরে কয়েকশো বিস্ফোরণ ঘটে।
শহরটাকে কার্যত বন্দি করে হামলা চালাচ্ছে রুশরা। যুদ্ধক্ষেত্রে আটকে পড়া সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ। বাইরে থেকে খাবার, পানীয় জলও পাঠানো যাচ্ছে না মারিয়ুপোলে। বিদ্যুৎ নেই, ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা নেই। অনেকেই বলছেন, ‘‘রাশিয়ার বোমায় নয়, ঠান্ডাতেই মরে যাবে মানুষগুলো।’’
দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের এই ছোট্ট শহরটির কিন্তু যুদ্ধের শুরুতেই পতন ঘটেছিল। মেলিটোপোল সেই থেকে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। অপহরণের ঘটনাটি অবশ্য সাম্প্রতিক বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। প্রকাশ্যে এসেছে আজই। তার পরই আজ রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামেন মেলিটোপোলের মানুষ। তাঁদের দাবি, মেয়রকে মুক্তি দিতে হবে। ফেডোরোভের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও।