তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তবে কি শুরু হতে চললো? জেনেনিন সর্বশেষ বিশ্লেষণ
বিশ্বের কি আর ঘুম আছে! যুদ্ধ লেগেই আছে কোথাও না কোথাও। গুগল জানালো কমপক্ষে ৪০টি ছোটবড় যুদ্ধ চলছে এখন বিশ্বজুড়ে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যুদ্ধাস্ত্রের পেছনে গবেষণা ও বাজেট।
ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গত আট বছরে মারা গেলো ১৪ হাজার মানুষ। ইথিওপিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেন আর্তনাদ করছে গৃহযুদ্ধের ক্যান্সারে। তাইওয়ানের ওপর বেড়েছে চীনের দাদাগিরি। হাইপারসনিক মিসাইলের সফল পরীক্ষাও চালালো বেইজিং। কক্ষপথে নিজেদের একখানা স্যাটেলাইট গুড়িয়ে দিয়ে কী যেন বোঝাতে চাইল রাশিয়া—সায়েন্স ফিকশন লেখকরা দ্বিধায় আছেন, ভবিষ্যতের যুদ্ধ বলতে তারা এতদিন যা ভেবেছেন, কমবেশি প্রায় সবই তো চলে এসেছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সব আয়োজন সম্পন্ন। এখন ফাঁকা গুলিটা কেউ ছুড়লেই শুরু হবে দৌড়।
আরও শক্তিধর ইসরায়েল
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-মধ্যপ্রাচ্য দ্বন্দ্বে এ বছরই আসছে বড় পরিবর্তন। দুশ’ কোটি ডলার দিয়ে লকহিড মার্টিন থেকে ইসরায়েল কিনতে চলেছে দুটো সিএইচ-৫৩ কে হেলিকপ্টার। বোয়িং থেকে কিনবে দুটো কেসি ৪৬এ ট্যাংকার উড়োজাহাজ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হতে পারে চলতি বছরেই। দুম করে দেশটির ডিফেন্স সক্ষমতা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। তখন আর পশ্চিম তীরে বসতি বাড়াতে নাফটালি বেনেটকে ঠেকায় কে!
হাইপারসনিক চীন
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার দীর্ঘ অধ্যায়ের অবসান ঘটলো আফগানিস্তানের পতনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু আধাখেঁচড়া এক যুদ্ধ গলধঃকরণ না করতেই বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিলো চীনের অভিনব হাইপারসনিক মিসাইল। শব্দের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গতির হোক, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু এ মিসাইল বড্ড বেয়াড়া। সাপের মতো এঁকেবেঁকে ছুটতে পারে মাঝ আকাশেই। রাডারের চোখ ফাঁকি দিতে প্রয়োজনে গোটা দুনিয়াটাকে পাক খেয়ে বেশ খানিকটা নিচু দিয়েও উড়তে পারবে এটি। গোত্তা খেয়ে আঘাত হানতে পারবে ঠিকঠাক লক্ষ্যবস্তুতে। রাডার যতক্ষণে ওটাকে শনাক্ত করবে, ততক্ষণে ঠেকানোর আর উপায় থাকবে না।
আর ৫-১০ বছর
এত এত বিনিয়োগ কি আদৌ চোখ রাঙানির জন্য? ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া কিংবা তাইওয়ান ইস্যুতে যদি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের গোল বেধেই যায় তবে কী হবে?
‘আমার মনে হয় এসব বেশ দ্রুত ঘটবে। আর এখানে তথ্য একটা বড় হাতিয়ারের কাজ করবে।’ বললেন ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর একজন সিনিয়র গবেষক মিয়া নুয়েন্স।
মিয়া জানালেন, ‘চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এরইমধ্যে স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স নামে একটা এজেন্সি বানিয়েছে। যাদের কাজই হলো মহাকাশ, ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুদ্ধের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করা। আর তাই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে প্রথম ঝাপটাটা যাবে সাইবার জগতের ওপর দিয়ে। একে অন্যের তথ্য ও যোগাযোগের চোখে পর্দা আটকে দিতে চাইবে। নষ্ট করবে স্যাটেলাইট, কেটে দেবে সাগরতলের ডাটা কেবল।’
ডলারে সমাধান?
মিশেলের এমন পরামর্শেই সম্ভবত মার্কিন কংগ্রেস এরইমধ্যে তাদের মিসাইল ডিফেন্স এজেন্সিকে ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক মিসাইলের মধ্যে লেজার প্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করার সবুজ সংকেত দিয়েছে। এ ছাড়া নিকট ভবিষ্যতের যুদ্ধের কমান্ড সিস্টেম কেমন হবে সেটা নিয়ে গবেষণা করতে নরথর্প নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে ১৪০ কোটি ডলার দিয়েছে বাইডেন সরকার। একইসঙ্গে আবার অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টারে কী করে আরও উন্নত টারবাইন ইঞ্জিন যোগ করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করতে বোয়িংয়ের সঙ্গে করেছে ২৪ কোটি ডলারের চুক্তি।
এতকিছুর পরও ঠিক স্বস্তিতে নেই আমেরিকা। ইউএস ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট গতবছরের নভেম্বরের এক রিপোর্টে জানালো, চীন তাদের নিউক্লিয়ার বোমার সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে। তাদের হিসাবে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশটিতে নিউক্লিয়ার ওয়রহেড এক হাজার ছাড়াবে। হাইপারসনিক মিসাইলে সেই পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালাতে চীন আবার দেশটির উত্তর-পশ্চিমে মিসাইল সাইলো বানাচ্ছে বলেও খবরে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিজের হাতেই আছে তিন হাজার ৭৫০টি নিউক্লিয়ার বোমা। এ অবস্থায় নিউক্লিয়ার নিরস্ত্রীকরণের কথা শুনতেই পারছে না রাশিয়া, চীন ও ইরান। চীন ওপর দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে, তারা নিউক্লিয়ার অস্ত্র হু হু করে বাড়াচ্ছে না, মেপে মেপে করছে সব। এশিয়ার নিরাপত্তা মানচিত্রে একটা বড় পরিবর্তন আসন্ন বলেই তাদের এত আয়োজন। সংখ্যায় কম হলেও ভারত, পাকিস্তানের হাতেও আছে পরমাণু বোমা।
তবে আতঙ্কটা মূলত বোমার সংখ্যা নিয়ে নয়। আশঙ্কা হলো, এত এত বোমা— কখন যে কোনটার সুইচ কার হাতে চলে যায় কে জানে!