ইউক্রেন সীমান্তে আরো এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া, আশঙ্কা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের
ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন সীমান্তে আরো এক লাখ রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের উত্তর সীমান্তে এসব সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো।
স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন এই অভিযোগ সামনে আনে। তাদের ভাষায়, ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রেখেছে মস্কো। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে সেনাসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করা হচ্ছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায়ও এসব সক্ষমতা ইউক্রেন ও বেলারুশ সীমান্তে অব্যাহতভাবে জড়ো করা হচ্ছে বলে আমরা দেখতে পারছি।
তিনি আরো বলেন, ঠিক কী পরিমাণ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা আমরা উল্লেখ করতে পারছি না কারণ সীমান্তে মোতায়েন করা সেনার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উল্লেখ করে কিরবি বলেন, উত্তরে তিনি নিশ্চিত ভাবেই আরো এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছেন এবং সেনা ও অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তিনি অব্যাহতভাবে কাজ করছেন। এছাড়া কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত আরো ব্যাটালিয়ন ইউক্রেন সীমান্তে যাচ্ছে বলে আমরা ইঙ্গিত পেয়েছি।
ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যে কোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
পেন্টাগনের মুখপাত্র আরো বলেন, প্রতিদিন পুতিন এ বিষয়ে বিকল্প যোগ করছেন। সীমান্তে প্রতিদিন তিনি তার সক্ষমতা বাড়াচ্ছেন। এরইমধ্যে উত্তপ্ত হয়ে থাকা একটি অঞ্চলকে আরো অস্থিতিশীল করতে প্রতিদিনই পুতিন কাজ করছেন।
অবশ্য সংকট সমাধানে পুতিনের ভূমিকার গুরুত্বও তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিরবির ভাষায়, সীমান্ত থেকে সেনাদের সরিয়ে নিয়ে এবং কূটনৈতিক পথে হেঁটে প্রেসিডেন্ট পুতিন খুব সহজেই ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন।
এর আগে চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, যে কোনো দিন ইউক্রেনে হামলা চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দিন দু’য়েক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাসভবন হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জ্যাক সুলিভান বলেন, কয়েকদিন বা সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
সেসময় তিনি আরো বলেন, আমরা এখন একটি মাঝামাঝি অবস্থানে আছি। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যে কোনো দিন সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। অথবা এটি এখন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও হতে পারে। অথবা রাশিয়া হয়তো কূটনৈতিক রাস্তাও বেছে নিতে পারে।
পরে এবিসি চ্যানেলর ‘দিজ উইক’ অনুষ্ঠানে সুলিভান বলেছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলা চালানোর নির্দেশ দেবেন, এমন সম্ভাবনা বেশ জোরালো। এটি আগামীকালও হতে পারে আবার, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও হতে পারে। সীমান্তে সেনা সমাবেশের মাধ্যমে পুতিন এমন এক অবস্থানে চলে গেছেন, যেখান থেকে তিনি আগ্রাসী আচরণ করতে সক্ষম।
রাশিয়া অবশ্য বারবারই বলে আসছে যে, ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই মস্কোর। আর ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন করা হলেও সেনাসদস্যরা আন্তর্জাতিক আইন মেনে রুশ ভূখণ্ডের ভেতরেই অবস্থান করছে।