আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার আক্রমণের আগেই, ইউক্রেনে সাইবার হামলা, বিপাকে হাজার হাজার মানুষ

ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার শুরু দিনই সাইবার হামলার শিকার হয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুই ব্যাংকের ওয়েবসাইট। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটটি হ্যাক হয়। একই সময়ে রাজধানী কিয়েভের দুই ব্যাংকের ওয়েবসাইটে হামলা চালিয়ে ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক পঙ্গু করে দেয় হ্যাকাররা, যার ফলে গ্রাহকরা পড়েন সীমাহীন ভোগান্তিতে।

এই হামলার জন্য সরাসরি নাম না নিলেও পরোক্ষভাবে মস্কোকে দায়ী করেছে কিয়েভ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কির নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে এই হামলা সম্পর্কে বলা হয়, ‘আগ্রাসী শক্তি ইউক্রেনে বড় হামলার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, তা কার্যকর করতে না পেরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু কোনো কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কয়েকটি সৈন্যদল প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তার সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষকরা বলেছেন, সীমান্তের অবস্থা অপরিবর্তিত আছে; কোনো সৈন্যদল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়নি।’

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশীরাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।

গত দুই মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখেরও বেশি সেনা মোতায়েন রেখেছে রাশিয়া। পাশাপাশি, সম্প্রতি সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার অন্যতম মিত্ররাষ্ট্র বেলারুশেও।

ইউক্রেন যেন ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়, মূলত সেজন্য দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টির করতেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছিল রাশিয়া। কারণ, ১৯৪৯ সালে গঠিত ন্যাটোকে রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপিত্যবাদের বিরোধী।

কিন্তু এই সেনা মোতায়েন ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে। এক পক্ষের সেনা মোতায়েন ও অপর পক্ষের উত্তেজনায় রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা দেখা দেয়, যা এখনও চলছে।

মঙ্গলবারের ভাষণে ইউক্রেনের সাইবার হামলা নিয়েও কথা বলেন জো বাইডেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদি রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র বা তার কোনো মিত্র দেশের বিরুদ্ধে সাইবার হামলা বা এই জাতীয় কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেয়, সেক্ষেত্রে আমরা তার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকব।’

Back to top button