ইউক্রেনে ভারতীয়দের পেলেই মারধর, দেওয়া হচ্ছে মরিচের গুঁড়ো! ভাইরাল ভিডিও
ইউক্রেন সীমান্তে আটকে পড়া শত শত ভারতীয় ছাত্রছাত্রী সে দেশের সেনা ও নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুমুল হেনস্থা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের সীমান্তে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সীমান্ত পেরোতে না দিয়ে মারধর করার একটি ভিডিও সামনে এসেছে। ভারতের বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধি সেই ভিডিওটি টুইটারে শেয়ারও করেছেন।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাহুল ওই ভিডিওটি পোস্ট করে লেখেন, ‘আমরা আমাদের নিজেদের লোকদের এই অবস্থায় ফেলে দিতে পারি না।’
সেখানে মেয়েদেরকে চুলের মুঠি ধরে টানা হচ্ছে এবং রড দিয়ে পেটানোও হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে প্রচণ্ড ঠান্ডা ও লড়াইয়ের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে রয়েছেন বহু ভারতীয়। অভিযোগ, ইউক্রেনীয়দের সহজেই সীমান্ত পার হতে দেয়া হলেও বেছে বেছে ভারতীয়দেরই আটকে দিচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা।
খবরে বলা হয়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন আগেও ইউক্রেনে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ হাজার। এদের অনেকেই আবার ডাক্তারি পড়ুয়া। তবে রাশিয়া পূর্ণ যুদ্ধ ঘোষণা করার আগেই দেশে ফেরেন অন্তত হাজার চারেক ভারতীয়। তারপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরাতে ‘অপারেশন গঙ্গা’ শুরু করে মোদি সরকার। যেহেতু ইউক্রেনের আকাশসীমা বন্ধ তাই প্রতিবেশী রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া হয়ে ভারতীয়দের ফেরানোর কাজ চলছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, আতঙ্ক ছড়াতে বার বার শূন্যে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও ভিসার লাইন থেকে টেনে টেনে ভারতীয়দের বার করার অভিযোগও রয়েছে। এমনকি ভারতীয়দের জমায়েত লক্ষ্য করে গাড়ি ছুটিয়ে এগিয়ে আসার অভিযোগও উঠেছে সেনাদের বিরুদ্ধে। মারধর এবং লাথিও ঘটনাও নাকি ঘটেছে।
দিল্লিতে অবস্থিত পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত টুইট করেছিলেন, ‘ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ভিসা ছাড়াই ঢুকতে দিচ্ছে পোল্যান্ড।’ যারা পোল্যান্ডের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন তারা জানিয়েছেন, এই কথা শতভাগ সত্যি। কিন্তু সেই পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারছেন না অধিকাংশ ভারতীয়। ইউক্রেনের বাহিনী তাদের সীমান্তের এ পারেই প্রতিহত করছে।
সীমান্তে এই অত্যাচারের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন এক ছাত্রী। তার বক্তব্য, ‘শুধু ইউক্রেনিয়ানদের ভিতরে যেতে দেয়া হচ্ছিল। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক মিনতি করি। তারপর শুধুমাত্র নারীদের কয়েক জনকে যেতে দিতে রাজি হন তারা। হঠাৎ কোথা থেকে পুলিশ এসে ভারতীয় ছাত্রদের বেধড়ক মারতে শুরু করলো!’
বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘে ভারতের অবস্থানের জন্যই ক্ষুব্ধ কিয়েভ। ফলস্বরূপ ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে সেদেশে থাকা ভারতীয়দের।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পেশ করে আমেরিকা। সেই প্রস্তাবে ভোট না দিয়ে কার্যত রাশিয়ার পাশেই দাঁড়ায় ভারত।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সামরিক অভিযান ঘোষণার কয়েক মিনিট পরেই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রুশ সেনারা। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ৩৫২ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং এক হাজার ৬৮৪ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া রাশিয়ার ৫ হাজার ৩০০ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।
ভিডিওটি দেখুন:
https://youtube.com/shorts/tqyLoSaGoA8?feature=share