স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, রাগ করে বিমানবন্দরে ১৪ বছর ধরে থাকছেন স্বামী
এক ব্যক্তির বিমানবন্দরে দীর্ঘ সময় বসবাস করার ঘটনার ওপর নির্মিত হয়েছে বিখ্যাত সিনেমা দ্য টার্মিনাল। এছাড়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী নির্মাণ করেছেন নো ল্যান্ডস ম্যান। বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসা ঘটনাটি যেন আবার বাস্তবে ফিরে এসেছে। গত ১৪ বছর ধরে বেইজিং বিমানবন্দরের টার্মিনালে বসবাস করছেন চীনের ওয়েই জিনগুও।
এই দীর্ঘ সময় বাড়িতে ফেরেননি তিনি। মূলত স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করেই ঘর ছেড়েছিলেন। তারপর বাকি জীবন বিমানবন্দরে কাটিয়ে দিচ্ছেন একাই। খবর ডেইলি মেইলের।
খবরে বলা হয়েছে, ওয়েই জিনগুও মূলত বেইজিংয়ের বাসিন্দা। ২০০৮ সালের ঘটনা। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড় করে বাড়ি ছাড়েন তিনি। তারপর থেকে বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই জীবন কাটছে ওয়েইয়ের। বিমানবন্দরের ২ নম্বর টার্মিনালকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছেন ওয়েই। ১৪ বছর ধরে এটাই তার আস্তানা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে ওয়েই নিজের জীবনের কাহিনি শুনিয়েছেন। তার কথায়, ‘আমি আমার বাড়িতে ফিরে যেতে পারব না। কারণ, সেখানে আমার কোনো স্বাধীনতা নেই। আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে বলেছেন, আমি যদি আমার বাড়িতে থাকতে চাই, তাহলে আমাকে মদ্যপান এবং ধূমপান ছাড়তে হবে। কিন্তু, আমি যদি নেশা না ছাড়তে পারি, তাহলে সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে পাওয়া ১ হাজার ইউয়ান পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিতে হবে। তাহলে সিগারেট, মদ কীভাবে কিনব?’
বিমানবন্দর চত্বরেই গুছিয়ে সংসার পেতেছেন এই ওয়েই। যেখানে বিমানযাত্রী ও তাদের আত্মীয়রা অপেক্ষা করেন, সেই আসনের সারির মাঝেই রয়েছে তার ছোট্ট রান্নাঘর! তার কাছে একটি ইলেক্ট্রিক কুকার রয়েছে। যেটা তিনি তার বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন। সাধারণত, সারাদিন বিমানবন্দরের এদিক ওদিক ঘুরেই কাটিয়ে দেন ওয়েই। নিজের প্রয়োজনের জিনিসপত্র কেনেন। সারাদিন ধরে কত মানুষ এখানে আসেন, তাদের দেখেন! এভাবেই কেটে যায় দিন, বছর। রাত হলে খাওয়া সেরে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন ওই চেয়ারেই।
২০০৪ সালে মুক্তি পায় হলিউড ছবি দ্য টার্মিনাল। সেই ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টম হ্যাংকস। তিনি ভিক্টর নভোরস্কি নামে এক পর্যটকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। ছবিতে দেখা যায়, পূর্ব ইউরোপের এক দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছন ভিক্টর। কিন্তু, তার ভিসায় কিছু সমস্যা থাকায় তাকে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। এদিকে, তিনি যে দেশে ফিরে যাবেন, সেই উপায়ও নেই। কারণ, সেখানে তখন সামরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে! এই অবস্থায় বিমানবন্দরেই থেকে যান ভিক্টর!
ভিক্টেরের এই চরিত্রটি বাস্তব থেকে অনুপ্রাণিত। সেই ব্যক্তির নাম মেহরান কারিমি নাসেরি। তিনি ছিলেন ইরানের বাসিন্দা। প্যারিসের বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে টানা ১৮ বছর আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি!