দেশ জুড়ে অর্থনৈতিক সংকট, রাস্তায় নামতে বাধ্য হলো লঙ্কানরা, গ্রেপ্তার ৫৪
অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মুখে প্রতিদিন নিয়ম করে বন্ধ রাখা হচ্ছে বিদ্যুৎ। ওষুধসংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে অস্ত্রোপচার।
ছাপার কাগজ আমদানি করতে না পারায় বাতিল হয়ে গেছে স্কুলের পরীক্ষা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতে হচ্ছে জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি ও দুধের মতো জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য।
সীমাহীন দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনসাধারণ। তারা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনের কাছে জড়ো হয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয় দুটি সামরিক বাস ও একটি পুলিশ ভ্যানে। ইটপাটকেল ছোড়ে পুলিশের দিকে এবং টায়ার জ্বালিয়ে রাজধানী কলম্বোতে প্রবেশের একটি মূল সড়ক অবরোধ করে রাখে।
পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমনে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে বলে জানা গেছে। তবে রাবার বুলেট বা গুলি চালানো হয়েছে কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। বিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৪ জনকে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয় বেশ কয়েকজন। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ওই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার রাতে কারফিউ জারি করা হলেও গতকাল শুক্রবার সকালে তা উঠিয়ে নেওয়া হয়।
গতকাল রাজাপক্ষের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, বিক্ষোভকারীরা ‘আরব বসন্ত’ ঘটাতে চেয়েছিল। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আরব বসন্তের ডাক দিয়ে আমাদের দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে বৃহস্পতিবার রাতের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছে উগ্রবাদী কিছু বাহিনী। ’
প্রায় এক দশক আগে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা ও দুর্নীতির প্রশ্নে সরকারের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছিল জনসাধারণ। সেটাই গোটা বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠে আরব বসন্ত নামে।
শ্রীলঙ্কার সরকারি সূত্র বলছে, বিক্ষোভের সময় বাড়িতে ছিলেন না রাজাপক্ষে। দেশটির ব্যক্তি মালিকানাধীন এক টেলিভিশন নেটওয়ার্কে বিক্ষোভের ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছিল। কিন্তু মাঝপথেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের দাবি, সরকারের চাপের মুখেই বন্ধ করে দিতে হয়েছিল সরাসরি সম্প্রচার। তবে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একাধিক ভিডিও।
দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন প্রেসিডেন্টের ভাই মাহিন্দা। আর ছোট ভাই বাসিল রয়েছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বড় ভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্রও রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদে।
কভিড-১৯ মহামারির কারণে ধস নামে দেশটির পর্যটন খাত ও রেমিট্যান্সে। অনেক অর্থনীতিবিদ অবশ্য বলছেন, সরকারি অব্যবস্থাপনা, অদূরদর্শী বড় প্রকল্পের জন্য নেওয়া বৈদেশিক ঋণের বোঝা পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলেছে।
শ্রীলঙ্কায় চলতি বছরের শুরু থেকে পেট্রলের দাম প্রায় দ্বিগুণ এবং ডিজেলের দাম ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। দেশটির ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ রয়েছে। সেটি পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করতে ২০২০ সালের মার্চে দেশটি আমদানির ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় দাম বেড়ে যায়।
শুক্রবারের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, মার্চে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি এখন ১৮.৭ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। দেশটিতে খাদ্যমূল্যও বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। এ পরিস্থিতিতে চীন ও ভারতের কাছেও নতুন করে ঋণ চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে শ্রীলঙ্কা। অনেকে আশঙ্কা করছেন, দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে দেশটি। দেউলিয়াত্ব এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছেও সাহায্য চেয়েছে দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপ রাষ্ট্র। সূত্র : এএফপি