ইউক্রেনকে ৩ দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া, চমকে দেওয়া ৭ টি তথ্য উঠে এলো স্যাটেলাইটে
সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে তাদের সৈন্য অপসরণ করেছে বলে দাবি তুলেছে। তবে মার্কিন স্পেস টেকনোলোজি কোম্পানি ম্যাক্সারের প্রেরিত কিছু স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায় এর ভিন্ন রূপ।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তোলা একটি ছবিতে দেখা যায় ইউক্রেনকে রাশিয়া ও বেলারুশ সীমান্তসহ তিনদিক দিয়ে সৈন্য দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।
রাশিয়ার সেনাদের কর্মকাণ্ড:
তবে বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো উত্তর পশ্চিম বেলারুশের ওচিপোভিচি প্রশিক্ষণ এলাকার কিছু দূরে একটি নতুন ফিল্ড হাসপাতালের উপস্থিতি।
যেটাকে কোনো বৈধ ফিল্ড অনুশীলনের অংশ বলে ধরা যাচ্ছে না বরং এটাকে আসন্ন সংঘর্ষে হতাহতের ইঙ্গিত হতে পারে।
ফিল্ড হসপিটাল:
এছাড়া ইউক্রেন সীমান্তের খুব কাছাকাছি আরও কিছু সৈন্যেদলের কর্মকাণ্ড দেখা যায়।
১৫ ফেব্রুয়ারি প্রিপায়াত নদীর উপর একটি সামরিক পন্টুন ব্রিজ লক্ষ্য করা যায়। যা ইউক্রেনের বেলারুশ সীমান্ত থেকে ৪ মাইলেরও কম দূরত্বে অবস্থিত।
পন্টুন ব্রিজ:
লন্ডন ভিত্তিক ম্যাকেঞ্জি ইন্টিলিজেন্স সার্ভিস এর বিশ্লেষকরা নদীর ডান তীরে বিশাল স্টেজিং এলাকা চিহ্নিত করেছেন, যেটাকে তারা বিশাল পরিমাণ যানবাহন চলাচলের সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করছে।
কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পন্টুন অপসরণ করেছে রাশিয়া।
তবে আরেকটি চিত্রে দেখা যায়, সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরে অবস্থিত বেলারুশের ব্রেস্টস্কি প্রশিক্ষণ এলাকায় স্ব-চালিত কামান বা বৃহৎ ক্যালিবার বন্দুকের একটি ট্যাঙ্ক চ্যাসিসে বসানো।
স্ব-চালিত কামান:
সীমান্ত থেকে ১৯ মাইল দূরে জায়াব্রোভকা এয়ারফিল্ডে নতুন আগত ২০টি অ্যান্টি ট্যাঙ্ক অ্যাটাক হেলিকপ্টার চিহ্নিত করা হয়েছে অন্য একটি ছবিতে।
ম্যাকেঞ্জি ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষকরা বলছে, এর মধ্যে ১২ টি সম্ভবত রাশিয়ান হোকুম এবং ৫ টি সম্ভবত হিন্দ বা এমআই হ্যাভোক হেলকপ্টার রয়েছে।
এয়ারক্রাফট ছবি:
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে বেলারুশে মোতায়েন করা রাশিয়ার ৩০ হাজার সৈন্য ইউক্রেন এবং ন্যাটো উভয়ের জন্যই উদ্বেগজনক। যা যৌথ অনুশীলনের অংশ হিসেবে আগামী ২০ তারিখ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তাই এই নির্দিষ্ট তারিখের পর মস্কোর আসল উদ্দেশ্য জানা যাবে। সে সময়ের স্যাটেলাইট ছবিই জানিয়ে দিবে রাশিয়া তাদের সৈন্য অপসরণ করেছে না থেকে গেছে।
এই ছবি যা বলে না:
এই ছবিগুলোতে এমন কোনো তথ্যই নেই যা প্রমাণ করে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতে যাচ্ছে বা চালাবে। রাশিয়া বারবার বলে যাচ্ছে, তারা আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা নেই, এসবই পশ্চিমাদের প্রোপাগান্ডা।
তবে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা প্রধান জানান, ইউক্রেনের চারপাশে তাদের আক্রমণ করার মতো যথেষ্ট সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে রাশিয়া, যারা পুতিনের নির্দেশ পেলেই আক্রমণ চালাবে।
ইউক্রেন সীমান্তের কাছাকাছি রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েনের ধরণ বেশ নজিরবিহীন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাইবেরিয়ার পূর্বে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী আনা হয়েছে।
রাশিয়া সৈন্যাদের অবস্থান:
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পুতিনের নেতৃত্বে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে।
দুটি বিষয়ের কারণে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যনীয়ভাবে শক্তিশালী করে তুলেছে।
প্রথমত রাষ্ট্রীয় খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে সামরিক ক্ষাতকে আধুনিকায়ণ এবং উন্নয়নের জন্য। এর মাধ্যমে সৈন্য, অস্ত্র, সাইবার এবং লজিস্টিকস সবই আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত রাশিয়ার কমান্ডার এবং পরিকল্পনাকারীরা সিরিয়া এবং পুর্ব ইউক্রেনে গত ৭ বছর যাবৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে অভিজ্ঞতা নিয়েছে। তাদের অস্ত্রগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কমান্ডাররা যুদ্ধ থেকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তাদের আগের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, মস্কো চাইলে মাস না হলেও ইউক্রেন সীমান্তে হুমকী প্রদর্শের উদ্দেশ্যে সৈন্য মোতায়েন রাখতে পারে কয়েক সপ্তাহের জন্য।