অনাস্থা ভোটে পিছিয়ে পড়ছেন ইমরান খান, কপালে চিন্তার ভাঁজ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। তবে প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার গুরুত্বপূর্ণ এই লড়াইয়ে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন তিনি। পার্লামেন্টে ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই ভোটের ব্যবধান বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকালে জিও টিভির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭৭-১৬৪ ভোটে পিছিয়ে পড়েছেন ইমরান। তবে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য ৩ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এদিন জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল বুধবার ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)। পার্লামেন্টে তাদের সাতজন আইনপ্রণেতা রয়েছেন। ভোটের আগে বিরোধীদের সঙ্গে তাদের হাত মেলানো ধুঁকতে থাকা পিটিআই সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৪২টি। ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন হবে। এদিকে জাতীয় পরিষদে পিটিআইয়ের ১৫৫ আইনপ্রণেতা রয়েছেন। এর মানে ইমরানের নিজ দলের ১৩ আইনপ্রণেতারও ভোটও বিরোধী জোটে যাচ্ছে।
অবশ্য নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের পক্ষ ত্যাগ ঠেকাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পিটিআইয়ের নেতারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের দিন দলীয় আইনপ্রণেতাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে বারণ করেছেন ইমরান। তবে এখন পর্যন্ত ভোটের যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে, ইমরান তা ঘোচাতে পারবেন বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা।
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগ তুলে গত সোমবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী নেতারা। এরপর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়। প্রস্তাবের ওপর বিতর্কের পর আগামী ৩ এপ্রিল ভোটাভুটি হতে পারে।
তারকা ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তাঁর সরকারের মেয়াদ রয়েছে। তবে অনাস্থা ভোটে আগেই প্রধানমন্ত্রিত্ব খোয়াতে হচ্ছে তাকে।
অবশ্য ইমরান অনাস্থা ভোটে হারলেও পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হবে না। আগামী আগস্ট পর্যন্ত সরকার চালিয়ে নিতে জাতীয় পরিষদের আইনপ্রণেতাদের ভোটে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য পরিষদের সব দলই প্রার্থী দিতে পারবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী তাঁর ক্ষমতাবলে যেকোনো সময়ে সাধারণ নির্বাচনের ডাক দিতে পারবেন। তবে ভোটে কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, সে ক্ষেত্রে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়ে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার ডাক দিয়ে ক্ষমতায় আসা ইমরান খান দেশটির রাজনীতিতে নয়া ইতিহাসে নাম তুলতে যাচ্ছেন। পার্লামেন্টে আনা বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে দেশটিতে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী বিদায় নিতে যাচ্ছেন। পাকিস্তানে এর আগেও কোনো প্রধানমন্ত্রীই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তবে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে তখন সেটা হয়েছিল।