আন্তর্জাতিকনিউজ

সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক, ১দিনে গ্রেপ্তার প্রায় ১৯০০ জন

ইস্তাম্বুলের মেয়র ইকরাম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের ঘটনায় দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিবৃতি তুরস্ক সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক নিন্দার জবাবে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বৃহস্পতিবার তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রায় ১,৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে অর্থায়নের অভিযোগে গত বুধবার ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) থেকে মনোনয়ন পাওয়ার কয়েক দিন আগে এই গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। কিছু মতামত জরিপে দেখা গেছে, কারাবন্দী ইমামোগলু আগামী নির্বাচনে এরদোয়ানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

দশকের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর তুরস্কে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। গত রোববার একটি আদালত তার বিচার মুলতবি ঘোষণা করে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এরপর থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা, ইজমিরসহ তুরস্কের বেশিরভাগ শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। বিরোধী দলগুলো এই ঘটনাকে ২০১৩ সালের সরকারবিরোধী গেজি পার্ক আন্দোলনের পর দেশের সবচেয়ে বড় জনআন্দোলন হিসেবে বর্ণনা করেছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান দাবি করেছেন, ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পেছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই এবং দেশের বিচারবিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে সিএইচপি, অন্যান্য বিরোধী দল, মানবাধিকার সংগঠন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মতে, এটি এরদোয়ানের সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীকে দূর করার রাজনৈতিক কৌশল। গ্রেপ্তারের পর ইমামোগলুকে মেয়রের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া জানিয়েছেন, “গত বুধবার থেকে বিক্ষোভ শুরুর পর ১,৮৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, ৪৮৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং বাকিদের মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। বিক্ষোভে ১৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “রাস্তায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সরকার কোনোভাবেই বরদাস্ত করবে না।”

নিষেধাজ্ঞা ও বিক্ষোভের বিস্তার
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর ইস্তাম্বুলে জনসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে বিরোধী নেতাকর্মীরা এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। পরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় আঙ্কারা ও ইজমিরেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভ দমনে পানির কামান, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারে পশ্চিমা দেশগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ফ্রান্স এটিকে “গণতন্ত্রের ওপর গুরুতর আঘাত” এবং জার্মানি “তুরস্কে গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর পশ্চাদপসরণ” হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে তুরস্ক এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

বিরোধীদের দাবি
সিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল বলেছেন, “ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এরদোয়ান জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চান। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।” বিরোধীরা দাবি করেছে, গ্রেপ্তারের পরও ইমামোগলুকে সমর্থন জানাতে দেশজুড়ে প্রতীকী ভোটদানে প্রায় দেড় কোটি মানুষ অংশ নিয়েছেন।

তুরস্কের এই রাজনৈতিক সংকট দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিক্ষোভ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা কীভাবে সমাধান হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।

সূত্র: রয়টার্স

Back to top button