নিউজ

নববর্ষের আগে ধুঁকছে ঐতিহ্যবাহী খাদি শিল্প! বর্তমানে খাদি শিল্পের অবস্থা কেমন জানেন? তাহলে পড়ুন

আসছে নতুন বাংলার বছর। পয়লা বৈশাখের দিনে অনেকেই নতুন পোশাকে সেজে ওঠেন। বিশেষত খাদি বস্ত্র পরিধান করার একটা আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে বাঙালির মধ্যে। কিন্তু বর্তমানে সেই খাদি শিল্পের অবস্থা কেমন, তা কি আমরা জানি? মুর্শিদাবাদের একমাত্র খাদি বস্ত্র তৈরির কেন্দ্র চক ইসলামপুর আজ প্রবল অস্তিত্ব সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে।

তুলার অভাব, শ্রমিক সংকট এবং উন্নত প্রযুক্তির মেশিনের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে ইসলামপুরের ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়। দেশের লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের মধ্যে এটিও একটি। হাতে চালিত তাঁতে তৈরি খাদি কাপড়ের চাহিদা কিছুটা থাকলেও, মজুরি তেমন না পাওয়ায় কারিগরেরা এই কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আরও বিভিন্ন কারণে এই প্রাচীন ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে।

একসময় মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরে কয়েকশো পরিবার খাদির কাপড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিল। দেশভাগের পর বাংলাদেশ থেকে এসে অনেকেই এখানে বসতি স্থাপন করেন এবং এই শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। খাদি শিল্প নামে পরিচিত এই অঞ্চলে এখন হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার টিকে আছে। মহাজনদের কাছ থেকে যে সামান্য অর্ডার আসে, তা দিয়েই কোনোমতে কাজ চালিয়ে যান কারিগরেরা। একসময় এই গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস ছিল এবং প্রায় সকলেই এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে মুষ্টিমেয় কয়েকটি পরিবারই এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় যে চরকায় সুতা কাটা স্বহস্তে তৈরি স্বদেশী পণ্য ঐতিহ্যবাহী খাদি শিল্প দ্রুত বিস্তার ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, আজ তা বিলুপ্তির কিনারে। সারাদিন খাদি বোনার কাজ করে কারিগরেরা মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মজুরি পান, যা দিয়ে তাঁদের সংসার চালানো কঠিন। তার উপর মেশিনে তৈরি নকল খাদি বাজার দখল করায়, হাতে বোনা আসল খাদি কাপড় বাজার হারাচ্ছে। চিকন সুতার চেয়ে মোটা সুতার খাদি কাপড়ের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। চরকায় কাটা সুতা ও হাতের তাঁতে তৈরি ইসলামপুরের খাদি এখন প্রায় দুর্লভ। ফলে নতুন প্রজন্মের যুবকরা আর এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই নতুন বছরে যখন সকলে আনন্দে নতুন বস্ত্র পরিধান করবেন, তখন এই ঐতিহ্যবাহী খাদি শিল্প প্রবল অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে ধুঁকতে থাকবে।

Back to top button