আন্তর্জাতিকনিউজ

“চীনকে ‘ধ্বংসাত্মক’ তৎপরতা বন্ধ করতে বলল তাইওয়ান”

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে চীন। রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে শতাধিক চীনা সামরিক বিমান ভূখণ্ডটির আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে প্রবেশ করেছে।

এই পরিস্থিতিতে চীনকে ‘ধ্বংসাত্মক’ সামরিক তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে তাইওয়ান। ভূখণ্ডটির দাবি, এই ধরনের কর্মকাণ্ডে তাইওয়ান প্রণালীর আশপাশে আবারও নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বীপের কাছে চীনা সামরিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির কথা জানিয়ে সোমবার ‘ধ্বংসাত্মক, একতরফা তৎপরতা’ বন্ধ করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে এই ধরনের আচরণ উত্তেজনার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটাতে পারে বলেও সতর্ক করেছে তারা।

মূলত চীন স্ব-শাসিত তাইওয়ানকে তার নিজের এলাকা বলে দাবি করে থাকে। এমনকি প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে একদিন তা দখল করার অঙ্গীকারও করেছে পরাশক্তি এই দেশটি। আর এই কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়মিতভাবে গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত এই দ্বীপের চারপাশে সামরিক মহড়া চালিয়েছে দেশটি।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রোববার থেকে তারা সমুদ্রের ওপরে দ্বীপের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে ১০৩টি চীনা সামরিক বিমান দেখেছে। এই সংখ্যাটিকে ‘সাম্প্রতিক সময়ে’ সবচেয়ে বেশি বলেও উল্লেখ করেছে তারা।

দ্বীপ ভূখণ্ডটির এই মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত মানচিত্র অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে চীনা বিমানগুলোকে দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমে তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করতেও দেখা যায়। মূলত এই মধ্যরেখাকেই উভয় পক্ষের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত বলে মনে করা হয়ে থাকে।

আবার অন্যান্য চীনা বিমান তাইওয়ানের দক্ষিণে বাশি চ্যানেল দিয়ে উড্ডয়ন করে যা দ্বীপটিকে ফিলিপাইন থেকে আলাদা করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পৃথক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোববার দিনব্যাপী চীনের এই কার্যক্রম তাইওয়ান প্রণালী এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ‘গুরুতর চ্যালেঞ্জ’ সৃষ্টি করেছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা এই অঞ্চলের সব পক্ষেরই সাধারণ দায়িত্ব।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘কমিউনিস্ট সামরিক বাহিনীর ক্রমাগত সামরিক হয়রানি সহজেই উত্তেজনার ব্যাপক বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার অবনতি ঘটাতে পারে। আমরা বেইজিং কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল হতে এবং অবিলম্বে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক একতরফা কর্মকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এদিকে তাইওয়ানের কাছে সামরিক বিমান অনুপ্রবেশের পাশাপাশি চীন গত সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরের কৌশলগত জলসীমা এবং তাইওয়ানের উত্তর-পূর্ব উপকূলসহ ওই অঞ্চলে মহড়া চালাতে শতাধিক জাহাজ প্রেরণ করে বলে একজন আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের কার্যকলাপ এই অঞ্চলের সকলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। একইসঙ্গে চীনের নৌ মহড়ার মাত্রাকে ‘গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড়’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে উল্লেখ করেছে, বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়টি ঐতিহ্যগতভাবে উপকূলীয় এলাকায় চীনা সামরিক মহড়ার জন্য ব্যস্ততম মৌসুম।

এছাড়া তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই মাসে তার দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, তাইওয়ানের দিকে মুখ করে চীন তার বিমান শক্তিকে শক্তিশালী করছে। এ লক্ষ্যে প্রসারিত বিমান ঘাঁটিতে স্থায়ীভাবে নতুন যোদ্ধা এবং ড্রোন মোতায়েনও করছে দেশটি।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এজন্য তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করতে সামরিক পথ খোলা রাখার বিষয়টিও বলে রেখেছে চীন।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

Back to top button