“একটি ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা”-গোপন চ্যাট ফাঁস, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ট্রাম্প প্রশাসনের

আমেরিকান ম্যাগাজিন “দ্য আটলান্টিক” ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে সিগন্যাল অ্যাপে চলা গ্রুপ চ্যাট প্রকাশ করার পর হোয়াইট হাউস তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রতিবেদনকে “ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করেছেন এবং “দ্য আটলান্টিক”কে একটি “ব্যর্থ ম্যাগাজিন” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
“দ্য আটলান্টিক” ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকে ভুলবশত যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র ক্যাবিনেট নেতাদের একটি গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত করা হয়েছিল। এই গ্রুপে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই গ্রুপে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের বিস্তারিত সময়সূচি, ইউনিট সংক্রান্ত তথ্য এবং ইয়েমেনে আসন্ন হামলার পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করেছিলেন।
গোল্ডবার্গ এই পুরো কথোপকথন তার প্রতিবেদনে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন যখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ তুলেছে এবং দাবি করেছে যে কোনও গোপন তথ্য শেয়ার করা হয়নি, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করার।” তবে ট্রাম্প প্রশাসন এখনও তাদের অবস্থানে অটল, জানিয়ে বলছে যে কোনও গোপন তথ্য ফাঁস হয়নি।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ও দায় চাপানো
ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “মাইক ওয়াল্টজ, আমার মনে হয় তিনি এর দায়ভার নিয়েছেন। আমাকে বলা হয়েছে এটি মাইকের দোষ।” তিনি তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের ওপর দায় চাপিয়েছেন, যিনি গ্রুপটি তৈরি করেছিলেন। তবে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের পক্ষ নিয়ে বলেন, “হেগসেথ দুর্দান্ত কাজ করছেন। এর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।” ট্রাম্প সিগন্যাল ফাঁস নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বলে জানিয়ে অ্যাপটিকে “খুব একটা ভালো নয়” বলে সমালোচনা করেন এবং গোল্ডবার্গকে “আপাদমস্তক প্রতারক” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
গোল্ডবার্গের জবাব
বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে গোল্ডবার্গ বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের আমার ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা না করে স্বীকার করা উচিত যে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। এই ত্রুটির সমাধান করা দরকার।” তিনি প্রথমে কিছু সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকলেও, প্রশাসনের অস্বীকৃতির পর দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বিস্তারিত মেসেজ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “জনগণের নিজেরাই সত্য-মিথ্যা বোঝার অধিকার রয়েছে।”
প্রশাসনের অবস্থান
চ্যাটে অংশ নেওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জ্যামাইকা সফরে বলেন, “নিঃসন্দেহে কেউ একটি বড় ভুল করেছে। একজন সাংবাদিককে গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছিল।” গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটিকে জানান, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এই ঘটনার তদন্ত করবে। তবে তিনি দাবি করেন, কোনও গোপন তথ্য প্রকাশিত হয়নি। মাইক ওয়াল্টজও বলেন, তিনি এর “সম্পূর্ণ দায়ভার” নিচ্ছেন।
হেগসেথের আত্মপক্ষ সমর্থন
পিট হেগসেথ হাওয়াইতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তারা জানে এটি যুদ্ধ পরিকল্পনা নয়। কোনও ইউনিট, স্থান, রুট, ফ্লাইট বা গোপন তথ্য ছিল না। আমার কাজ সময়মতো আপডেট দেওয়া, আমি তাই করেছি।” তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তথ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং কমার্শিয়াল অ্যাপে শেয়ার করা উচিত হয়নি।
ডেমোক্র্যাটদের দাবি
ডেমোক্র্যাটরা হেগসেথের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তারা বলছেন, এই তথ্য প্রতিপক্ষের হাতে পড়লে মার্কিন কর্মকর্তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারতো। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গোল্ডবার্গকে “অ্যান্টি-ট্রাম্প হেটার” আখ্যা দিয়ে বলেন, “মিডিয়া এই ‘সিগন্যাল ষড়যন্ত্র’ ছড়াচ্ছে। আসল গল্প হলো হুথিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান।”
প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু
“দ্য আটলান্টিক” প্রকাশিত মেসেজে ইয়েমেনে হামলার বিস্তারিত, ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন, সিআইএ-এর কার্যক্রম এবং ইসরায়েলি হামলার আলোচনা ছিল। গোল্ডবার্গ ও শ্যেন হ্যারিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, “ট্রাম্পের উপদেষ্টারা অনিরাপদ মাধ্যমে যেসব তথ্য শেয়ার করেছেন, জনগণ চায় তা উন্মুক্ত হোক।”
এই ঘটনা মার্কিন নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি এবং ট্রাম্প প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।