পিরিয়ডকালীন সময়ে যে কাজগুলো থেকে বিরত থাকবেন এবং যেসব খাবার খাবেন
একজন নারী যে শারীরিকভাবে সুস্থ এবং গর্ভধারণে সক্ষম, তার অন্যতম চিহ্ন হলো নিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড। পিরিয়ডের দিনগুলো অন্য স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে একটু ভিন্ন রকম থাকে। হরমোনাল কারণে কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সাধিত হয়। পিরিয়ডের সময় নারীদের শরীর অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি নাজুক থাকে। অনেকের জরায়ু নিচের দিকে নেমে আসে, তলপেট স্ফীত হয়, ব্যথা করে, এমনকি বমিও হয়। কিছু কাজ রয়েছে যা এ সময়ে করলে শরীরের অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে। এ সময়ে করা যাবে না এমন কোনো কাজ যা শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
উপুড় হয়ে শোয়া
অনেকেরই পেটে ভীষণ ব্যথা থাকে বলে পেটে চাপ দিয়ে শুয়ে থাকেন। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলে তা পেটে এমনভাবে চাপ ফেলে যে সেটা মোটেও ভালো নয়। এছাড়া এ সময় উপুড় হয়ে শুলে হার্ট রেটে তারতম্য হয়, রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং অক্সিজেন ঠিকমতো সরবরাহ হয় না বলে মাথা ঝিমঝিম বা ব্যথা করে।
ভারী জিনিস তোলা
নারীদের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ থাকে তাদের পেটে। যেমন জরায়ু বা ডিম্বাশয়। তাই খুব বেশি ভারী জিনিস টেনে তোলা নারীদের জন্য ভালো নয়। আর পিরিয়ডের সময় তো একেবারেই নয়।
ভারী ব্যায়াম
পিরিয়ডের সময় ভারী কোনো ব্যায়াম করা একেবারেই উচিত নয়। পিরিয়ডের সময় করার জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়াম রয়েছে, সেগুলো করতে পারেন। যোগব্যায়ামের কিছু আসন পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে খুবই কাজে দেয়।
প্রস্রাব আটকে রাখা
এই বদঅভ্যাসটা অনেকরই আছে। প্রস্রাব পেলে তা আটকে রাখা কখনোই উচিত নয়। এটি কিডনির ওপরে ভয়াবহ রকমের চাপ ফেলে। বারবার প্যাড পাল্টানোর ভয়ে অনেকেই পিরিয়ডের সময় প্রস্রাব চেপে রাখেন। এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এ সময়ে এইকাজ তলপেটের ওপর চাপ ফেলে এবং ব্যথা দীর্ঘসময় ধরে থাকে।
জোরে চিৎকার করা
পিরিয়ডের সময় রাগ, বিরক্তি, জেদ তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। রেগে গিয়ে জোরে চিত্কার চেঁচামেচি করবেন না। এর ফল হবে ভয়ানক। এটি সরাসরি তলপেটে চাপ ফেলে। কাউকে ডাকতে গিয়েও জোরে চিৎকার করবেন না। চিৎকার করতে শরীরের যেসব পেশীর ওপর জোর দিতে হয় তার মধ্যে পেটের পেশীও আছে।
জল কম খাওয়া
ঘন ঘন প্রস্রাব লাগবে ভেবে অনেকেই এ সময় জল কম খান। অথচ পিরিয়ডের সময়েই বেশি করে জল খাওয়া উচিত। প্রচুর পরিমাণে জল পান শরীরকে দুর্বল হবার হাত থেকে বাঁচায়। এছাড়া রক্তের তরল্যের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যেও এ সময় প্রচুর পরিমাণে জল ও তরল খাবার খাওয়া উচিত।
যেসব খাবার খাবেন
পিরিয়ডের সময় বিশেষ খাবার? খাওয়া দূরে থাক, শিরোনাম পড়েই অস্বস্তিতে ভুগতে শুরু করেছেন অনেক নারী। আমাদের দেশে মেয়েরা অনেক বড় বড় অসুখও যেখানে লজ্জায় লুকিয়ে রাখেন, সেখানে পিরিয়ডের সময় খাওয়া দাওয়ার দিকে মনযোগ দেয়ার ব্যাপারটা তো কারো মাথাতেই আসবে না। তবে সত্যটা হচ্ছে, পিরিয়ডের এই ৩-৫ দিন অনেকটা রক্ত বের হয়ে যায় শরীর থেকে, আর তাই অবশ্যই শরীরের চাই বিশেষ খাবার। তা না হলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন, দেখা দেবে নানান শারীরিক সমস্যা।
আসুন, জেনে নিই পিরিয়ডের সময় কোন খাবারগুলো নারীর জন্য খুব জরুরী।
১) জল
একথা ভুলে গেলে চলবে না যে কেবল রক্তপাত নয়, সেই সাথে শরীর হারাচ্ছে অনেক খানি তরল। আর এই অভাব পূরণ করতে পান করতে হবে প্রচুর জল । না, পানীয় নয়। সাধারণ জল । চা, কফি, কোলা ইত্যাদির চাইতে অনেক বেশী স্বাস্থ্যকর সাধারণ জল । হালকা কুসুম গরম জল পান করতে পারেন, এতে পেট ব্যথায় আরাম হবে।
২) মাছ
বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। এবং এগুলো পিরিয়ড চলাকালীন শরীরের ক্ষয় পূরণ করে এবং ব্যথা কমাতেও ভূমিকা রাখে। পিরিয়ডের সময় মাছ খেতে ভুলবেন না যেন। সামুদ্রিক মাছ খেলে আরও ভালো।
৩)কলা
হ্যাঁ, কলা। পিরিয়ডের দিনগুলিতে কলা খেতে ভুলবেন না একেবারেই। কলা পটাশিয়ামের ও ভিটামিনের খুব ভালো উৎস, যা পিরিয়ডের সময় আপনার জন্য জরুরী। এই কলা পিরিয়ডকালীন বিষণ্ণতা কমাতেও সহায়ক। তাছাড়া পিরিয়ডের সময় অনেক নারীই ডায়রিয়াতে ভুগে থাকেন, যা দূর করতে সাহায্য করবে এই কলা।
৪) লাল মাংস
শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় পিরিয়ডের সময়ে, যা পূরণ করবে লাল মাংস। চর্বি ছাড়া লাল মাংস অবশ্যই রাখুন খাবারের তালিকায়, সাথে রাখুন প্রচুর সালাদ। শরীর থাকবে সুস্থ।
৫) বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার
বাদাম ভর্তি নানান রকম ভিটামিন ও মিনারেলে যা পিরিয়ডের সময় শরীরের জন্য ভালো। তবে খেয়াল রাখবেন, বাজারের বাড়তি লবণে ভাজা বা চিনিতে জড়ানো বাদাম খাবেন না। চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদি তো খেতে পারেনই। সাথে বীজ কুমড়ার বীজ সহ নানা ধরণের বীজ রাখতে পারেন খাবারের তালিকায়।
৬) ডার্ক চকলেট
পিরিয়ডের সময় প্রতিদিন কয়েক টুকরো ডার্ক চকলেট হতে পারে আপনার জন্য দারুণ উপকারী। ডার্ক চকলেটে চিনি নেই, ফলে ওজন বাড়বে না। বরং আছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম। এই চকলেট পিরিয়ড চলাকালীন বিষণ্ণতাও দূর করবে।
৭) সবুজ শাক
সবুজ শাক ও সালাদের পাতা জাতীয় খাদ্য এই মুহূর্তে আপনার সবচাইতে বেশী প্রয়োজন। এতে আছে প্রচুর আয়রন, যা শরীরের ক্ষয় পূরণে সহায়তা করবে। অবশ্যই প্রতি বেলার খাবারে রাখুন সবুজ পাতা, যেমন- বিভিন্ন ধরণের শাক ও সালাদ লিফ।