নিম্ন রক্তচাপ কেন হয় এবং কিভাবে মুক্তি পাবেন, জেনেনিন
নিম্ন রক্তচাপ হল মানব দেহের রক্ত সংবাহন তন্ত্রের এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তের সিস্টোলিক চাপ ৯০ মি.মি.পারদ এর নিচে এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৬০ মি.মি. এর নিচে থাকে যাই হোক, ক্লিনিক্যালি তখনই নিম্ন রক্তচাপ বলে যদি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। উচ্চ রক্তচাপ স্বাস্থ্যের জন্য যে কী পরিমাণ ভয়ংকর হতে পারে, সে সম্পর্কে কম বেশি সবারই ধারণা রয়েছে। কখনও কখনও নিম্ন রক্তচাপও ভয়ংকর প্রমানিত হতে পারে আপনার জন্য।
নিম্ন রক্তচাপের কারণ:
বিভিন্ন কারণে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে –
১. জল শূন্যতা:
নিম্ন রক্তচাপ এড়াতে প্রচুর জল খেতে হবে। যদি অল্পতে আপনার জল শূন্যতা দেখা দেয়া তাহলে এ ব্যপারে দ্রুত সতর্ক হয়া উচিত। শরীর থেকে যত জল জড়াবে তার থেকে বেশি জল খেতে হবে। আপনি যদি বাইরে পরিশ্রম করেন তাহলে লেবুর সরবত ও সেলাইন বেশি করে খাবেন।
২. গর্ভাবস্থা:
গর্ভাবস্থায় নিম্ন রক্তচাপ হয়ার সম্ভবনা খুব বেশি থাকে। তাই এ সময় নিয়মিত রক্তে সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।
৩. হার্টের সম্যসা:
কিছু হার্টের সম্যসা নিম্ন রক্তচাপের জন্য দায়ী।
৪. পুষ্টির ঘাটতি:
ভিটামিনের অভাবে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। বি-১২ ও আয়রনের অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দেয় যা নিম্ন রক্তচাপে রূপ নেয়।
লক্ষণ :
মাথা ঘোরানো, হঠাৎ বসা বা শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালে ভারসাম্যহীন বোধ করা, হঠাৎ জ্ঞান হারানো বা অস্বাভাবিক দ্রুত হৃৎস্পন্দন নিম্ন রক্তচাপের প্রাথমিক লক্ষণ। এছাড়া বুকে ব্যথা, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মূর্ছা যাওয়া, হালকা জ্বর, প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা ও কাশি হতে পারে। নিম্ন রক্তচাপ সমস্যায় যারা ভোগেন তাঁরা প্রায় সারাদিনই ক্লান্তি অনুভব করেন।
নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ :
১. অনেকক্ষণ একই স্থানে বসে বা শুয়ে থাকার পর ওঠার সময় সাবধানে ও ধীরে উঠুন।
২. ঘন ঘন হালকা খাবার খান। বেশি সময় খালি পেটে থাকলে রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
৪. পাতে এক চিমটি করে লবণও খেতে পারেন।
৫. দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় গ্লুকোজ ও স্যালাইন রাখুন।
হোম প্রতিকার নিম্ন রক্তচাপের :
১. লবণ খাওয়া বাড়ান:
নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে খাবারে লবণের পরিমাণ একটু খানি বাড়িয়ে দিন। লবণ রক্তচাপ বাড়াতে সহায়তা করে। এক গ্লাস জল তে ১/২ চা চামচ লবণ গুলিয়ে নিন। নিয়মিত নিম্ন রক্তচাপ সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন দিনে দুই বার করে এভাবে লবণ গোলানো – জল খান। অথবা স্যালাইনও খেতে পারেন।
২. মধু:
নিম্ন রক্তচাপের কারণে যাদের মাথা ঘোরানোর সমস্যায় পড়েন তাঁরা মাথা ঘোরানো কম করার জন্য মধু খেতে পারেন। মধু তাৎক্ষনিক ভাবে মাথা ঘোরানো কমাতে সহায়তা করবে। এক গ্লাস জল দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এবার জল এক চিমটি লবণ গুলিয়ে নিন। এবার মধু ও লবণ মেশানো জল টি খেয়ে নিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিম্ন রক্তচাপজনিত মাথা ঘুরানো কমে যাবে।
৩. আনার :
আনার ফলটি বেশ দামী। কিন্তু এটি নিম্ন রক্তচাপের ক্ষেত্রে বেশ ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাই যারা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের সামর্থ্য থাকলে খাবার তালিকায় নিয়মিত আনার রাখুন। আনার ফল হিসেবে খেতে পারেন অন্যান্য ফলের সাথে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। ব্লেন্ডারে আনার দানা দিয়ে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিন। এরপর জুস হিসেবে আনারের রস খেতে পারেন।
৪. প্রচুর জল খান :
জল শূন্যতার কারণে অনেক মানুষ নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন। তাই রক্তচাপ কমে যাওয়ার সমস্যা থাকলে প্রচুর জল পান করুন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল পান করুন। প্রচুর তাজা ফলের রস খেতে পারেন।
৫. তুলসী পাতা :
প্রচুর ঔষধি গুনাগুণ সম্পন্ন তুলসী পাতা নিম্ন রক্তচাপ সমস্যা সমাধান করতেও সহায়ক। ১০-১৫ টি তুলসী পাতা বেটে নিন বা ছেঁচে নিন। তুলসী পাতার রসে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তুলসী পাতার রস ও মধুর মিশ্রণটি খান।
৬. পুষ্টিকর খাবার খান:
খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন করলে নিম্ন রক্তচাপ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। খাবার তালিকায় বিশেষ কিছু পুষ্টিকর খাবার রাখুন। প্রতিদিন প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। আঁশ জাতীয় খাবার, মাছ, মাংস,দুধ, ডিম এবং প্রচুর সবজী রাখুন খাবার তালিকায়। শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, আলু, রুটি, আলু, চিনি ইত্যাদি খাওয়া কমিয়ে দিন। প্রতিদিন কিছুক্ষন পর পর অল্প অল্প করে খাবেন। তাহলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে।
৭. মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন :
অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং বিশ্রামের অভাবের কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। রাত জেগে কাজ করবেন না। নেতিবাচক চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন। প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘন্টা ঘুমান।