হরমোনের কারণে আপনার ওজন বাড়লে কী করবেন, জানা আছে কি?
শরীরের ওজন কিন্তু সব সময়ে খাওয়া দাওয়া, ঘুমের জন্য বাড়ে না। যদি হরমোনের সমস্যা থাকে তবে কম খেলেও ওজন বেড়ে যায়। আর বেশিরভাগ সময়েই আমরা বুঝি না কী করতে হবে। আজ জেনে নিন হরমোনের কারণে ওজন বাড়লে কী কী করতে পারেন।
করটিসল: শরীর এই হরমোনের লেভেলে ইমব্যালেন্স থাকলে দেহের পুরো সিস্টেম তা একাই ধ্বংস করতে পারে। যা অতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরি ও ফ্যাট সেল তৈরি করে এবং এগুলো শরীরের ওজন বাড়ায়।
যা করবেন: আপনাকে প্রতি রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে হবে। তাই মেডিটেশন করতে হবে। প্রসেসড ও প্রিজারভেটিভ খাবার এড়িয়ে চলুন।
থাইরয়েড: থাইরয়েডের অভাবে শরীরে ফ্যাট বাড়তে থাকে এবং দেহে জল জমতে থাকে। ফলে হঠাৎ করেই কেজি ওজন বেড়ে যায়।
যা করবেন: থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখাবেন। আর ওষুধের সাহায্যে সবসময় হরমোন ব্যালান্সে রাখার চেষ্টা করবেন। আয়োডিন যুক্ত লবণ খাবেন এবং কাঁচা শাক সবজি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবেন।
লেপটিন: অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার, চিনি এবং চিনি যুক্ত খাবার আমাদের দেহে অতিরিক্ত লেপটিন তৈরি করে। এতে দেহের ‘লেপটিন সেনসিটিভিটি’ কমে যায়। এতে সে বোঝে না যে তার আর খাবারের দরকার নেই এবং সে অতিরিক্ত খাবার খেয়েই যায় । আর এরই ফল অতিরিক্ত ওজনের বাড়ে।
যা করবেন: দুই তিন ঘণ্টা পরপর স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খান। অতিরিক্ত চিনি, মিষ্টি এবং মিষ্টি ফল পরিহার করুন। এবং প্রচুর জল খান। বিস্কুট, চানাচুর, সাদা চিনি, কোল্ড ড্রিংক খাওয়া একেবারেই বন্ধ করুন।
মেলাটোনিন: ‘ঘুমের হরমোন’নামেই এর পরিচিতি বেশি। মেলাটোনিন-এর লেভেলে অসামাঞ্জস্য দেখা দিলে ইনফ্লেমেশন বাড়ে, দেহে অতিরিক্ত জল জমে যায়, মেটাবলিসম স্লো হয়ে যায় এবং ফলাফলে ওজন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
যা করবেন: রাত ১০ টার পড়ে ঘরে কোন আলো জ্বালাবেন না, চোখের সামনে ফোন, পিসি, টিভি রাখবেন না। কাঠবাদাম, চেরি, সূর্যমুখীর বীজ, এলাচি এসব খাবার তালিকায় এসব রাখার চেষ্টা করুন।
ইসট্রোজেন: প্রধানত নারী প্রজনন হরমোন। ইসট্রোজেন লেভেল বেড়ে গেলে দেহে ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা কমে আসে। আর তখনি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি শুরু হয়। ফলাফলে প্রজননে সমস্যাসহ আরও অনেক জটিল শারীরিক রোগ ব্যাধি দেখা দেয়।
যা করবেন: সাদা ময়দা, সাদা ভাত, সাদা চিনি এসব বাদ দিন। যতটা পারেন পরিষ্কার অরগানিক খাবার খান। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করে দেহের হরমোন লেভেল ঠিক রাখুন। পোলট্রি, রেডমিট, ডেইরি একেবারেই বাদ দিন।
যেসব কারণে ওজন বাড়ে:
বছরে একজন মানুষের কম পক্ষে আধা থেকে এক কেজি করে ওজন বাড়ে। যদিও মনে হচ্ছে এই পরিমাণ খুবই কম কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে এটা সাড়ে চার থেকে ৯ কেজি বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যয়াম ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেকের আবার এসব করা সত্ত্বেও ওজন বেড়ে যায়। এর কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।
আজকের পৃথিবীতে সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। একারণে অনেকে খাবারটাও অতি দ্রুত খায়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, তাড়াহুড়া করে খাবার খেলে ওজন বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তাড়াহুড়া করে খায় তাদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি। দ্রুত খাবার খেলে পেট ভরে গেলেও মস্তিষ্ক শরীরকে সংকেত দিতে পারে না। একারণে ওজন কমাতে হলে খাবার ভালো করে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খেতে হবে।
পর্যাপ্ত জল পান না করলে পিপাসা লাগে। আর পিপাসা পেলে বারবার খাবার খেতে ইচ্ছে হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালের খাবারের আগে অন্তত দুই কাপ জল পান করেন তারা অন্যদের চাইতে কমপক্ষে ২২ শতাংশ পরিমাণ কম ক্যালরির খাবার খান। জলে কোনো ক্যালরি থাকে না। যদি খালি পেটে খালি জল পান করতে কষ্ট হয় তাহলে জলের সঙ্গে শসা, লেবু অথবা অন্য কোনো ফল যোগ করতে পারেন।
বেশি বেশি সামাজিক হওয়াটাও বিপদজনক। কারণ বেশি সামাজিক হলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হয়। আর সেইসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের ওজনসমৃদ্ধ খাবার, অ্যালকোহল থাকে। এসব নিয়মিত খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকলেও ওজন বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন তাদের মধ্যে মোটা হওবার প্রবণতা বাড়ে। সেই সঙ্গে নানা ধরনের অসংক্রামক রোগের সম্ভাবনা এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঘুম পর্যাপ্ত না হলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা গড়ে ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের মধ্যে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।যারা বিশ্রাম নেওয়ার একদম সময় পান না তারাও মোটা হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।
টেলিভিশন দেখতে দেখতে, ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে করতে কিংবা নিউজপেপার পড়তে পড়তে অনেকে খাবার খান। মনোযোগ দিয়ে খাবার না খেলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে মোটা হোয়ার আশঙ্কাও থাকে।
প্রোটিন, ফাইবারযুক্ত খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে না খেলেও ওজন বাড়ে।
অনেকে আছেন দুই, তিনতলা উঠতেও সিড়ির পরিবর্তে লিফট ব্যবহার করেন। এ ধরনের প্রবণতা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
বেশিমাত্রায় ফাস্টফুড খেলে ওজন বাড়ে। আবার বেশি পরিমাণে দুধ দিয়ে তৈরি কফিও ওজন বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে , যারা অনিয়মিতভাবে খাবার খায় তাদের মধ্যে মোটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনিয়মিত সময়ে খাবার খেলে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। এজন্য প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া উচিত।