লাইফস্টাইল

শিশুদের ক্যানসার: বিরল হলেও মারাত্মক, প্রাথমিক শনাক্তকরণই জীবন বাঁচাতে পারে

ছোটদের মধ্যে ক্যানসার তুলনামূলকভাবে বিরল, যা সমস্ত ক্যানসার নির্ণয়ের মাত্র ১ শতাংশেরও কম। তবে এটি শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। উন্নত চিকিৎসা এবং শিশুদের জীবন রক্ষায় রোগের প্রাথমিক সনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অনেক লক্ষণ সাধারণ শৈশব অসুস্থতার সাথে মিলে যায়, তবুও বাবা-মায়েদের সতর্কতা এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।

ডিজিটাল পেডিয়াট্রিক কেয়ার প্ল্যাটফর্ম বেবিনামার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ডাঃ সুমিত্রা মীনা এইচটি লাইফস্টাইলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে শিশুদের ক্যানসারের বিভিন্ন ধরণ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তিনি জানান, “শিশুদের ক্যানসার প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যানসারের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। সবচেয়ে সাধারণ ধরণের মধ্যে রয়েছে লিউকেমিয়া (রক্তকোষ ক্যানসার), মস্তিষ্কের টিউমার, লিম্ফোমা (লিম্ফোমা সিস্টেম ক্যানসার), নিউরোব্লাস্টোমা (স্নায়ু কোষ ক্যানসার), উইলমস টিউমার (কিডনি ক্যানসার), হাড়ের ক্যানসার (অস্টিওসারকোমা এবং ইউইং সারকোমা) এবং নরম টিস্যু সারকোমা।”

যদিও শৈশব ক্যানসার বিরল, তবে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ডাঃ সুমিত্রা মীনা উল্লেখ করেন, “চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে, তবে ক্যানসার নিজেই এবং কখনও কখনও এর চিকিৎসা শিশুদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের কারণ হতে পারে।”

বয়স এবং ঝুঁকির কারণ:

ডাঃ সুমিত্রা মীনা জানান, ক্যানসার যেকোনো বয়সেই হতে পারে, তবে কিছু ধরণের ক্যানসার নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, লিউকেমিয়া ছোট বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, অন্যদিকে হাড়ের ক্যানসার কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রকোপ বেশি। বেশিরভাগ শৈশব ক্যানসারের সঠিক কারণ অজানা। তবে, ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে জেনেটিক অবস্থা (যেমন, ডাউন সিনড্রোম), ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস, তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শ এবং কিছু পরিবেশগত কারণ।

সাধারণ লক্ষণ যা বাবা-মায়েদের নজরে রাখা উচিত:

ডাঃ সুমিত্রা মীনার মতে, বাবা-মায়েদের কিছু সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত যা কোনো অস্বাভাবিকতা নির্দেশ করতে পারে:

কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী অথবা বারবার জ্বর আসা।
অস্বাভাবিক ক্লান্তি, অবসাদ অথবা শরীরে শক্তির অভাব।
খাবার গ্রহণ বা দৈনন্দিন কার্যকলাপে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই উল্লেখযোগ্য ওজন হ্রাস।
খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া অথবা খেতে অসুবিধা হওয়া।
দীর্ঘস্থায়ী ফ্যাকাশে ভাব।
নির্দিষ্ট লক্ষণগুলির প্রতিও নজর দিন:

সাধারণ লক্ষণগুলির পাশাপাশি, ডাঃ সুমিত্রা মীনা আরও কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণের দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন:

শরীরের যেকোনো স্থানে পিণ্ড অথবা ফোলাভাব দেখা দেওয়া।
হাড়ের ব্যথা যা ক্রমাগত অথবা বারবার হচ্ছে।
ঘন ঘন অথবা তীব্র মাথাব্যথা, বিশেষ করে বমি সহ।
হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন।
সহজে কালশিটে পড়া, নাক অথবা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া।
ত্বকের অস্বাভাবিক পরিবর্তন, ফুসকুড়ি, বিবর্ণতা অথবা এমন ঘা যা সহজে সারছে না।
স্নায়বিক লক্ষণ যেমন আচরণ, সমন্বয় অথবা ভারসাম্যের পরিবর্তন।
পেট ফুলে যাওয়া অথবা অস্বস্তি অনুভব করা।
বেঁচে থাকার হার এবং চিকিৎসা:

ডাঃ সুমিত্রা মীনা আশার বাণী শুনিয়েছেন, “চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে শৈশব ক্যানসারের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে পাঁচ বছরের বেঁচে থাকার হার এখন ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।” চিকিৎসার সাফল্য মূলত ক্যানসারের ধরণ, রোগের পর্যায় এবং শিশুর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, সার্জারি এবং ইমিউনোথেরাপি।

যদিও অনেক শৈশবকালীন ক্যানসারের কারণ সম্পূর্ণরূপে বোধগম্য নয়, তবুও বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। ডাঃ সুমিত্রা মীনা জোর দিয়ে বলেন, “একটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টি সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য, প্রক্রিয়াজাত ও জাঙ্ক খাবার কম খাওয়ানো এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে এটি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এবং কিছু রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।”

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন:

ডাঃ সুমিত্রা মীনার পরামর্শ, “আপনার সন্তানের যদি কোনো উদ্বেগজনক লক্ষণ দেখা দেয়, বিশেষ করে যদি সেগুলি অব্যাহত থাকে, ক্রমশ খারাপ হয় অথবা একাধিক লক্ষণ একসাথে দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। যদি কারও সন্তানের স্বাস্থ্য বা বিকাশ সম্পর্কে কোনো উদ্বেগ থাকে, বিশেষ করে যদি ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না। আপনার সহজাত প্রবৃত্তির উপর আস্থা রাখুন – প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় করাই এক্ষেত্রে মূল চাবিকাঠি।”

Back to top button