রাতে শোওয়ার বালিশও হতে পারে চুল পড়ার কারণ! জেনে নিন কীভাবে রক্ষা করবেন আপনার চুল

আধুনিক জীবনযাত্রায় চুল পড়ার সমস্যা একটি অতি পরিচিত বিষয়। এর পেছনে অনেক কারণ থাকলেও, সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা রাতে শোওয়ার বালিশকেও চুল পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, বালিশের কভারের উপাদান এবং অপরিষ্কার থাকার কারণে চুলের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বালিশের কভারের কাপড়ের সঙ্গে চুলের ঘর্ষণের ফলে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে। এর জের ধরে চুলের ডগা ফেটে যাওয়া, রুক্ষতা, শুষ্কতা এবং শেষ পর্যন্ত চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, বালিশের কভারে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং তেল চুলের গোড়ায় আটকে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা চুল পড়ার হার আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. বালিশের কভারের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ক্ষতি:
সুতির বালিশের কভার: সুতির কাপড় চুল থেকে প্রাকৃতিক তেল এবং আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়। ফলে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। রাতের বেলা বালিশের সাথে চুলের ক্রমাগত ঘর্ষণের কারণে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে চুল ভেঙে যাওয়া এবং ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
সিল্ক বা সাটিনের বালিশের কভার: সিল্ক বা সাটিনের মতো মসৃণ উপকরণ চুলের সাথে কম ঘর্ষণ সৃষ্টি করে এবং চুল থেকে তেল শোষণ করে না। ফলে চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
২. ব্যাকটেরিয়া এবং জমে থাকা তেল:
না ধোয়া বালিশের কভার: দীর্ঘদিন বালিশের কভার না ধুলে তাতে তেল, মৃত ত্বকের কোষ এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জমা হতে থাকে। ঘুমানোর সময় এই জীবাণু আপনার চুল এবং মাথার ত্বকের সংস্পর্শে আসে। এটি চুলের ফলিকলে ব্লকেজ তৈরি করে, যার ফলে প্রদাহ এবং চুল পড়ার সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত ধোয়া: চুলকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত (প্রতি ১-২ সপ্তাহ অন্তর) বালিশের কভার ধোয়া অপরিহার্য। এটি বালিশে তেল ও মৃত কোষ জমতে বাধা দেয় এবং চুলের ক্ষতি কমিয়ে আনে।
৩. অন্যান্য কারণ:
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন যে প্রতিদিন কিছু পরিমাণে চুল পড়া স্বাভাবিক (প্রায় ৫০-১০০টি)। তবে, এর চেয়ে বেশি চুল পড়লে তা টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (মানসিক চাপের কারণে চুল পড়া) বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ টেলোজেন এফ্লুভিয়ামের কারণ হতে পারে, যা চুল পড়ার হার বাড়িয়ে দেয়।
হরমোনের ওঠানামা: গর্ভাবস্থা, প্রসব পরবর্তী সময় বা থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, শরীরের স্বাভাবিক হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেও চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে।
সুতরাং, আপনার চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে বালিশের কভারের উপাদান এবং পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত বালিশের কভার পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি সম্ভব হলে সিল্ক বা সাটিনের কভার ব্যবহার করে আপনি চুল পড়ার সমস্যা অনেকাংশে কমাতে পারেন। তবে অতিরিক্ত চুল পড়লে অবশ্যই একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।