বিনোদন

প্রয়াত হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, স্মৃতি স্মরণে পড়েনিন তার কালজয়ী কবিতা

মারা গেলেন টলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জি। তিনি আজ রবিবার দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিট সময়ে প্রয়াত হন। বাংলা অভিনয় জগতের অন্যতম নক্ষত্র সৌমিত্র চ্যাটার্জি মারা গেলেন ৮৫ বছর বয়সে।

গতকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছিলো যে সৌমিত্র বাবুর অবস্থা এখন আশংকা জনক। তার শারীরিক অবস্থা রয়েছে অত্যন্ত সংকটে। তিনি এই মুহূর্তে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন না । আর আজ দুপুরেই এলো সেই দু সংবাদ।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি দীর্ঘকাল তিনি আবৃত্তিকার হিসেবে সুপরিচিত। কবি হিসেবেও স্বনামধন্য। কবিতা লেখার শুরু ছাত্র অবস্থায়—প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অন্তমিল’, ‘স্বেচ্ছাবন্দি আষাঢ় কুহকে’, ‘জলপ্রপাতের ধারে দাঁড়াবো ব’লে’, ‘ব্যক্তিগত নক্ষত্রমালা’, ‘শব্দরা আমার বাগানে’, ‘পড়ে আছে চন্দনের চিতা’, ‘হায় চিরজল’, ‘হে সায়ংকাল’, ‘জন্ম যায় জন্ম যাবে’, ‘হলুদ রোদ্দুর’, ‘মধ্যরাতের সংকেত’ প্রভৃতি।

পড়ন্ত ছায়ার মধ্যে

পেছন থেকে কে চিৎকার করে উঠতেই

আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম

ঝিলের মধ্যে আকাশ গা ডুবিয়ে রয়েছে

অতিকায় নিমবাস মেঘ

স্তম্ভিত প্রতিবিম্বে

বনপথে শরৎ ছিল বা

বিবিশ গন্ধের মধ্যে মনে পড়ে।

কটা বাজে কে জানে

ঘড়ির একটা দাগও স্পষ্ট নেই এতদিনে

কোথায় কোথায় আয়েস পরিতৃপ্তি লিপ্সা ছিল

সব কটি দাগ মুছে গেছে

আন্দাজে কিছু বলা ঠিক হবে না তো,

কৈফিয়ত আফসোস

এই মুহূর্তে এসবের কোনো দাম নেই।

ভারী, দামী পাথরের টুকরোর মত সময়কে

ঢালু জমির ওপর গড়িয়ে যেতে দেখছি

জলের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে,

অনতিপ্রদোষের মধ্যে

সব ছবিগুলো ডুবে যাবে

ঝিল, জলের ভিতরে ছায়া আকাশনিমের।

কার মুখ দেখা যাবে

আততায়ী অত্যাচারী কিনা

এই সবই পড়ন্ত ছায়ার মধ্যে সন্ধান করেছিলাম

ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে যে সামনে এসে দাঁড়াল

সে আমার এতগুলি বছরের নিঃসঙ্গতা

হাস্যকর ভাঁড়ের পোশাকে।

ব্যক্তিগত নক্ষত্রমালা

ভালোবাসা মানেই কেবলই যাওয়া

যেখানেই থাকি না কেন

উঠে পড়া

পেয়ে গেলে নিকটতম যান

কলকাতা কিছুতেই ফুরতে চায় না

কোনো রাস্তা ফরতে চায় না

কখনও তুমি মিনিবাস ধরে নেবে

আমি ঝংকার দেওয়া ট্রাম—

তারপর থেকে কেবলই যাওয়া

কাছ থেকে অনেক দূরে

কিংবা সময় ঠিক করা থাকলে কাছে আসা

ক্যাথিড্রালের দুর্লভ ঘণ্টা বাজছে

সখ্যতায় ভরে উঠেছে ময়দান

মাঘের বিকেলে।

এক চিলতে গলি তারই নাম সুখ

তারই অন্ধকারে

আমি স্পর্শ করেছিলাম তোমার দিব্য চিবুক—

সঙ্গে সঙ্গে শৈলসানু আঁধার হয়ে এল

গোলপাতা ছাউনির ঘর

শীতরাত্রির স্বপ্ন ক’টি মুড়িসুড়ি দিয়ে বসে গেছে

শীলাতল

ব্যগ্র হয়ে কেড়ে নিচ্ছে উত্তাপ কোমল

দু’জনের থেকে—

তোমার চিবুক স্পর্শ ক’রে কতদূর আমরা যেতে পারি

এক চিলতে গলি তারই নাম সুখ

তারই অন্ধকারে

স্বপ্ন থেকে স্বপ্নে প্রস্থান আলবৎ সম্ভব

অথবা দুঃখের ভিতর থেকে আরো দুঃখের ভিতর

নিয়ে যেতে পারে

ভালোবাসা

ভালোবাসা মানে কেবলই যাওয়া

কোলকাতা রোল করা গালিচার মত কেবলই খুলে

যাচ্ছে কেবলই

আমাদের পায়ের নিচে

ফুরোচ্ছে না।

তবু ভালোবাসা ফুরায়ে গেলে

আমি অপ্রেম থেকে চলে যাব ব’লে

অভিমানে বাসস্টপে এসে হাত নেড়ে ডাকি

ভালোবাসা কখনও কখনও চলে যাওয়া

ঘর গ’ড়ে ঘর ভেঙে ফেলা

তারপর উঠে পড়া

পেয়ে গেলে নিকটতম ট্রাম

পড়ে থাক রাজবংশ বৈভব যা কিছু

সব ছেড়ে চলে যেতে পারে শুধু ভালোবাসাই—

সেই কোনোদিন

ফিরে এসে তাকাতে পারে অকপটে অনিমেষ

ক্যাথিড্রালে ঘণ্টা বাজলেই

কিনতে থাকবে মুহূর্ত এন্তার

একরাশ ব্যক্তিগত নীল নক্ষত্রমালা।

ভালোবাসা বহুদিন আগে

ভালোবাসা বহুদিন আগেই

বাসে উঠে পড়তে না পেরে

দাঁড়িয়ে গেছে

হয়ত এখনও বাসস্টপে

মুখ তার

আঠারো বছরের শ্যামল ইস্পাত

হয়ে দাঁড়িয়ে আছে

এক একদিন ইচ্ছে করে

ফিরতি বাসে উঠে চলে যাই

দেখে আসি তাকে

এক একদিন আমার যাওয়ার সম্ভাবনায়

বৃষ্টি আসে

আকাশকে আষাঢ় ব’লে ডাকতে ইচ্ছে করে।

‘এই যে, এত দেরী করলে কেন’

ব’লে কেউ কব্জিটা শক্ত ক’রে

ধ’রে নামিয়ে নেবে

আঠারো বছরের মুখে কিছুটা ইস্পাত থাকে

এখন হাতে পিস্তল রাখা বারণ

তাই নীল ইস্পাতটুকু মুখে

ভালোবাসার কাছে কিছুই নেই এখন

কার্তুজ বন্ধুরা রাজনীতি

একটি বর্ষাতিও নয়

বরষায় তাকে খুব একা দেখব বোধহয়

যদি ফিরতি বাসে যাই।

Back to top button