বাঙালি অভিনেত্রী নুসরাতের তো বাচ্চা হচ্ছে, তুমি ওর জায়গায় হলে কী করতে?: তসলিমা নাসরিন
বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তাসলিমা নাসরিন নুসরাতের বাচ্চা প্রসঙ্গে দিলেন তার প্রতিক্রিয়া। তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে। সেই প্রতিক্রিয়ার হুবহু তুলে ধরা হলো আমাদের পেজে –
কথোপকথন
—বাঙালি অভিনেত্রী নুসরাতের তো বাচ্চা হচ্ছে। তুমি ওর জায়গায় হলে কী করতে?
—আমি হলে বাচ্চাকাচ্চার ঝামেলায় যেতাম না।
—কেন বাচ্চাকাচ্চা চাও না? সব মেয়েই তো চায়।
—সব মেয়েই চায় ঠিক নয়, অনেক মেয়েই চায় না। সভ্য দেশের বেশির ভাগ সভ্য মেয়ে বাচ্চা হওয়ায় না।
—কেন?
—তারা নিজেদের জরায়ু বলে মনে করে না। তারা মনে করে তাদের জীবন জরায়ুর চেয়ে অনেক মূল্যবান। তাছাড়া পৃথিবীতে বাচ্চার তো অভাব নেই ।
—মাতৃত্বের স্বাদ?
—বাকোয়াজ। পুরুষদের শেখানো জিনিস।
—তোমার কাছে তো মনে হচ্ছে মাতৃত্বের স্বাদ আর চাটনির স্বাদ একই জিনিস।
—তা হবে কেন, চাটনির স্বাদ নিলে জীবন বরবাদ হয় না।
—বাচ্চা নিলে জীবন বরবাদ হয়?
—বাচ্চা মানুষ করতে গিয়ে অনেকের জীবন নাশ হয়ে যায়। বাচ্চা তো যে কেউ হওয়াতে পারে, মানুষ করতে ক’জন পারে! মানুষ করতে পারলে কুলাঙ্গারে দুনিয়া এত ভরা থাকতো না।
—মেয়েরা যদি বাচ্চা না নেয়, তাহলে তো মানবজাতি বলে কিছু থাকবে না!
—মানবজাতি টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব বুঝি আমাদের? আমরা তো নিজেরাই টিকে থাকতে পারছি না। ভায়োলেন্সের শিকার হচ্ছি প্রতিদিন!
—নুসরাত তো স্বামীর স্পার্মে বাচ্চা হওয়াচ্ছে না।
—সেটা তার ইচ্ছে। স্পার্ম কার সেটা বড় কথা নয়, তার বাচ্চা নিতে ইচ্ছে করছে, সে নিচ্ছে। গর্ভে যে ধারণ করে, বাচ্চা মূলত তার। এক সময় তো স্পার্মের জন্য পুরুষের ওপর নির্ভর করতে হবে না। মেয়েদের স্টেম সেল থেকে স্পার্ম তৈরি হতে পারে, মেয়েদের বোন ম্যারো থেকে স্পার্ম তৈরি হতে পারে।
—ওসবে তো ওয়াই নেই। হবে কী করে?
—ওয়াই নিয়েই ঝামেলা। বিজ্ঞানীরা এখনও পরীক্ষা নিরিক্ষা করছেন। দেখা যাক। ওয়াই তো একা পুরুষের শরীরে। একা একটি ক্রোমজম মোটেও শক্তিশালী নয়, ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে পারে, ভেঙ্গে যেতে পারে, বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আমাদের তো দুটো এক্স, পুরুষের একটি। এক্সের জোরটা বেশি।
—বলতে চাইছো মেয়েদের জোরটা বেশি?
—মেয়েরা তো সামাজিকভাবে দাসিবাঁদি হয়ে আছে। তবে টিকে থাকার বেলায় মেয়েরা এগিয়ে আছে।
—বাচ্চা নেই বলে তোমার কি কোনও আফসোস হয়?
—মোটেও না। মাঝে মাঝে ভাবি ইয়ং বয়সে কী ভালো কাজটাই না করেছি দুম করে কোনও বাচ্চা না নিয়ে। অবশ্য সবাই এভাবে ভাবে না। আমার এক কাজিন আছে, ওর স্বামীর স্পার্মের অভাব, তাই কাজিনের বাচ্চা হয়নি। ও বাবা, কাজিন তো দিনরাত ডিপ্রেশানের সাগরে ডুবে থাকে। অথচ কাজিন কী ব্রিলিয়ান্ট। জীবনটাকে ও বরবাদ করে দিল। আবার আরেক ভাইকে দেখেছি, দুটো আপদ জন্ম দিয়েছে। আপদগুলোর কারণে জীবন বরবাদ হয়ে গেছে।
—নুসরাতের সঙ্গে পরিচয় আছে?
—না, পরিচয় হওয়ার কোনও সম্ভাবনাও নেই। আমি ছবির জগতের মানুষ নই।
—ওর বাচ্চার জন্য আশীর্বাদ তো অন্তত করো।
—উইশ টুইশে কিছু হয় না। দোয়া আশির্বাদ এগুলো কথার সৌন্দর্য। নুসরাত প্রতিষ্ঠিত মেয়ে। কারো দাসিবাঁদি নয়। নিজের ইচ্ছের মূল্য দিতে জানে। সে তার সন্তানকে ভালো মানুষ করবে, এ আমার বিশ্বাস।