লতা মঙ্গেশকরের অজানা দশ জীবন কাহিনী
না ফেরার দেশে চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর। দশকের পর দশক ধরে মোহিত ছিল তাঁর জাদুমাখা কন্ঠে। জানুয়ারির শুরুতেই করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে লতার। তারপর গত ৯ জানুয়ারি মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। করোনা কাটিয়ে উঠলেও ৯২ বছর বয়সে কোভিড পরবর্তী অসুস্থতার ধাক্কা সামলাতে পারলেন না শিল্পী। সাত দশক ধরে দর্শক ও সমালোচক হৃদয় তৃপ্ত করে চলা ভারতীয় সংগীতের এই জীবন্ত কিংবদন্তি ১৯২৯ সালে ভারতের ইন্দোরে জন্মেছিলেন। কিন্তু তাঁর সংগীত ভারত ছাপিয়ে তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বসংগীতের দরবারে। জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর অনেক বিষয়ই সবার কাছে জানা। আবার কিছু বিষয় আছে যা অনেকেই জানেন না। প্রয়াণ দিনে লতা মঙ্গেশকরের এমনই কিছু অজানা বিষয় নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
বয়স যখন মাত্র পাঁচ
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর! না কোনো নায়িকার ঠোঁটে বাজেনি তাঁর গান, তিনি নিজেই হাজির হয়েছিলেন ক্যামেরার সামনে। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন গোয়ালিয়র ঘরানার একজন শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতা। তাঁর মিউজিক্যাল প্লে’গুলোতে লতা প্রথম অভিনয় শুরু করেন।
হেমা থেকে লতা
লতার মঙ্গেশকরের নাম শুরুতে ‘লতা’ ছিল না। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘হেমা’। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মুঙ্গেশকরের ‘ভাও বন্ধন’ নাটকে লতিকা নামে একটি বিখ্যাত চরিত্রের নাম অনুসারে তিনি হয়ে যান ‘লতা মুঙ্গেশকর’।
হার্দিকর থেকে মঙ্গেশকর
মঙ্গেশকর পরিবারের পদবি ছিল হার্দিকর। দীননাথ এই হার্দিকর পরিবর্তন করে করেন মঙ্গেশকর।
মারাঠি গানে ক্যারিয়ারের শুরু
লতা মঙ্গেশকর তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৪২ সালে, মারাঠি গান গেয়ে। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম হিন্দি সিনেমার জন্য গান করেন। বসন্ত জোগলেকরের ‘আপ কি সেবা মে’ ছবিতে তিনি ‘পা লাগু কার জোরি’ গানটি গেয়েছিলেন। দুই বছর পর সুরকার গুলাম হায়দার তাঁকে প্রথম বড় সুযোগ দেন। ‘মজবুর’ ছবিতে ‘দিন মেরা তোরা’ গানটির পর লতাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
শাস্ত্রীয় থেকে রোমান্টিক সব সংগীতেই লতা
তিনি ভারতের প্রধান সুরকারদের প্রায় সবার সঙ্গেই কাজ করেছেন। সংগীতের প্রায় সব ধরনেই তিনি গান করেছেন। শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে শুরু করে রোমান্টিক গান, এমনকি ভজনও গেয়েছেন তিনি। সব ধরনের গানেই তিনি পেয়েছেন সাধুবাদ- কখনো দর্শকদের, কখনো সমালোচকদের।
সাড়ে সাত হাজার গান
সংগীতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ডের ইতিহাস আশা ভোঁসলের। তিনি গেয়েছেন প্রায় দশ হাজার গান। গিনিজ বইয়ের এ রেকর্ডটি ছোট বোন আশার হওয়ার আগে ছিল লতা মঙ্গেশকর। লতা গেয়েছেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার গান।
রয়্যালটি নিয়ে ঝগড়া!
ভারতীয় সংগীতের আরেক কিংবদন্তি শিল্পী মোহাম্মদ রফির সঙ্গে প্রায় তিন বছর কোনো গান করেননি লতা। পরে এক সাক্ষাৎকারে লতা বলেন, তাঁরা সংগীতের রয়্যালটি নিয়ে ঝগড়া করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে শিল্পীদের একটি সমিতি ছিল। মুকেশ, তালাত মাহমুদরা তখন একটি দাবি তুলেছিলেন, শিল্পীদের তাঁদের প্রাপ্ত সম্মানী বুঝিয়ে দিতে হবে। যদিও লতা রয়্যালটি পেতেন, কিন্তু তিনি এই দাবি সমর্থন করেন। আর মোহাম্মদ রফি এ দাবির বিরোধিতা করেন। এই নিয়েই দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। লতা দাবি করেছেন, পরে রফি ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। এরপর তাঁরা শংকর-জয়কিষাণের সুরে গান করেন তাঁরা। কিন্তু মোহাম্মদ রফির পুত্র শহীদ রফি এ কথার প্রতিবাদ করে বলেছেন, এমন কোনো চিঠি রফি লেখেননি।
আশার সঙ্গে বিবাদ
বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গেও লতার মনোমালিন্য হয়েছিল। লতা বলেছিলেন, আশার প্রথম স্বামী গণপতরাও ভোঁসলের কারণে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। সম্ভবত গণপত মনে করতেন, আশা লতার কারণে কাজ পান না। চল্লিশের দশকের শেষদিকে দুই বোনের ক্যারিয়ার শুরুর পর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে লতার দ্রুত উত্থান ঘটে। অন্যদিকে আশা তখনো সংগ্রাম করছিলেন। লতা বলেন, গণপত আশাকে তাঁদের বাড়িতে যেতে নিষেধ করেন। তাঁদের দেখা-সাক্ষাৎও তিনি বন্ধ করে দেন। পরে আশার দ্বিতীয় স্বামী রাহুল দেব বর্মণ দুই বোনকে কাছে আনেন।
রাজ্যসভার সদস্য
১৯৯৯ সালে ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়। কিন্তু লতা রাজ্যসভার অধিবেশনগুলোতে খুব বেশি একটা যেতেন না। এ নিয়ে অন্যান্য সদস্যরা তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। লতা তাঁর অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে বলেছিলেন তাঁর অসুস্থতার কথা।
৩৬ ভাষায় গান
লতা মুঙ্গেশকর প্রায় ৩৬টি ভাষায় গান করেছেন। এর মধ্যে আছে বাংলাও। ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘ও মোর ময়না গো’, ‘ও পলাশ ও শিমুল’, ‘আকাশ প্রদীপ জ্বেলে’সহ আরও অনেক বিখ্যাত বাংলা গানের কণ্ঠ তাঁর। মিড-ডে।