বিনোদন

“মা হওয়ার থেকেও মাতৃত্ব অর্জন করা কঠিন”, পিসিমার স্তন‍্যপান করে প্রাণে বেঁচেছিলেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়!

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)-র মৃত্যু তাঁর কাছে কোনোদিন হবে না। সমগ্র ইন্ডাস্ট্রিতে এই কথা বলেছিলেন একজন কিংবদন্তী। তিনি, যাঁর অভিনয় সর্বত্র মনোমুগ্ধকর। তাঁর নাম পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Paran Bandopadhyay)। কখনও কখনও সংশয় হয়, তিনি কি সত্যিই চরিত্রের জন্য তৈরি না চরিত্রটিই আসলে তিনি। আশি পেরিয়েও এভারগ্রিন পরাণবাবুকে আবারও দেখা যাবে নতুন ফিল্ম ‘টনিক’-এ। সেখানে দেব (Dev)-এর সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাঁকে। এবার মাতৃত্ব, শিশুর অধিকার ও আইন-আদালতের বিষয়ে নিজের মতামত পেশ করলেন তিনি। কারণ তাঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে এই ব্যাপারগুলি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত রয়েছে।

পরাণ মনে করেন, মা হওয়ার থেকেও মাতৃত্ব অর্জন করা কঠিন। জন্মের পাঁচ মাসের মধ্যেই মাতৃহারা পরাণের একরত্তি প্রাণ বেঁচেছিল তাঁর পিসিমা কমলা দেবীর স্তন‍্যপান করে। তাঁকেই মা বলে ডাকতেন পরাণ। আমৃত‍্যু কমলা দেবীই থাকবেন তাঁর মা। মাত্র সাত বছর বয়সে যশোরের বাড়ির পাট চুকিয়ে পিসিমার কাছে চলে এসেছিলেন পরাণ। পিসতুতো দাদা জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন পরাণের পিতৃসম। একাধারে স্নেহ, শাসন, ভালোবাসা দিয়ে ভাইকে আগলে রাখতেন তিনি। শৈশব থেকে বাবা-মায়ের অভাব বুঝতে পারেননি পরাণ। বলা ভালো, বুঝতে দেওয়া হয়নি। জন্মদাতা পিতা ক্কচিৎ গ্রাম থেকে এসে পরাণের সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটাতেন। তাঁর হাত ধরে শৈশবে মেলা দেখা, তাঁর উদাত্ত কন্ঠের গান শোনা আজও মনে আছে পরাণের। কিন্তু বাবার প্রতি টান অনুভব করতেন না তিনি। নিজের বাবাকে বরাবর ‘কাকা’ বলে ডাকতেন পরাণ।

কমলা দেবী স্তন‍্যপান করালেও পরাণকে কোনোদিন মাতৃত্বের অধিকারে দাবি করেননি। কিন্তু দাবি করলেও তা অনস্বীকার্য ছিল, বললেন পরাণ। তাঁর বাবার মধ্যেও পিতৃত্বের দাবি নিয়ে ছিল না কোনো জটিলতা। গ্রাম থেকে পিতৃহারা হওয়ার খবর পরাণের কাছে এলে কলকাতাতেই বাবার পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম সেরেছিলেন তিনি। তাঁর মনে কোনো হেলদোল ছিল না।

এই প্রসঙ্গে ‘পোস্ত’ ফিল্মের প্রসঙ্গ টেনে এনে পরাণ বলেন, আইন-আদালত নিয়ম মেনে চলুক। কিন্তু তার পাশাপাশি জানা উচিত, একজন শিশু কার কাছে থাকতে চায়! শিশুর অধিকার নিয়ে লড়াই হলে তার মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসা ও স্নেহের পথ ও আইনি নিয়ম সবসময়ই এক নাও হতে পারে। মাতৃত্ব ও পিতৃত্ব অর্জন করতে হলে স্নেহ, ভালোবাসা ও ত্যাগের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন পরাণ।

Back to top button