স্বামী ছেড়ে গেছেন, ছেড়ে চলে গিয়েছেন রাণুর মেয়ে মেঘা, রানুর জীবনের লড়াই নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী
একসময় ‘সেক্রেড গেমস’-এর সাহসী দৃশ্যে তাঁর অভিনয় দেখে চমকানোর পাশাপাশি কুৎসা রটানো হয়েছিল। হাওড়ার মন্দিরতলা থেকে মুম্বই রওনা দিয়েছিলেন ঈশিকা দে (Eeshika Dey)। অনুষ্কা শর্মা (Anushka Sharma)-র প্রযোজনায় ‘পরী’-তে অভিনয় করলেও নজরে আসেননি তিনি। কিন্তু ‘মিস রাণু মারিয়া’-র লুক সেটের পর সবাই এখন সেই মেয়েটিকেই একশোয় হাজার দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সেই মেয়ে ঈশিকা কি গ্রহণ করবেন নম্বরের আধিক্য নাকি রাণু মন্ডল (Ranu Mondal)-এর মতোই এবার তাঁর পাশে কাউকে ঘেঁষতে দেবেন না!
কিছুদিনের মধ্যেই পর্দায় রাণুকে ফুটিয়ে তুলতে চলেছেন ঈশিকা। তিনি মনে করেন পরিচালক হৃষিকেশ মন্ডল (Hrishikesh Mondal) তাঁর উপর ভরসা রেখেছেন। একইসঙ্গে এই ফিল্মের সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ভর করছে তাঁর উপর। ফলে তিনি একইসঙ্গে নিন্দিত ও নন্দিত। আপাতত ঈশিকা চিন্তা করছেন, রাণুকে সত্যিই তিনি ধারণ করতে পারবেন তো! তাঁর লুক টেস্ট নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই হলেও তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই ঈশিকার। তিনি মনে করেন, রাণুর মধ্যে অনেকগুলি স্তর রয়েছে যা ফুটিয়ে তোলা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। রাণুর চরিত্র নিয়ে ভাবতে গিয়ে মাঝে মাঝে নিজেই বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন ঈশিকা। ফলে কখনও দ্বারস্থ হতে হচ্ছে এসএসকেএম-এর মনোবিদ কমলিকা ভট্টাচার্য (Kamalika Bhattacharya)-এর।
ঈশিকা জানিয়েছেন, ভালোবাসা পাননি রাণু। সবাই তাঁর কাছ থেকে শুনে নিয়ে বলেছেন, নিজেরটা নিজে বুঝে নিতে। স্বামী ছেড়ে গেছেন। ছেড়ে চলে গিয়েছেন রাণুর মেয়ে মেঘা (Megha)-ও। রাণু নিজের মেয়ে মেঘার সঙ্গে ঈশিকার অনেক মিল খুঁজে পান। তাই কাউকে কাছে ঘেঁষতে না দিলেও ঈশিকাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন। ঈশিকাও রাণুকে ‘রাণুমা’ বলেই ডাকেন। ঈশিকার চোখে রাণু আঘাত পেতে পেতে অবশ হয়ে যাওয়া একটি মানুষ যাঁকে আজ খ্যাতি বা দুর্নাম কিছুই স্পর্শ করে না। তিনি নিজেকে সারাক্ষণ বোঝান, একাই তিনি ভালো আছেন। কাউকে তাঁর প্রয়োজন নেই। নিজের ভিতরে গুগলে বাঁচলেও চোখে জল আসতে দেন না রাণু।
View this post on Instagram
প্রথমে রাণুর রাণাঘাটের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে থাকতে রীতিমতো ভয় করত ঈশিকার। রাতের দিকে বাঁশঝাড় থেকে ভেসে আসা শব্দে ভয় পেয়েছেন। কিন্তু কখন যেন সব ভয় কেটে গেল। ঘুচে গেল ব্যবধান। ফলে যখন চলে আসছেন, তাঁর রাণুমা তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, তাঁকে ছেড়ে না যেতে। ঈশিকার মতো করে কেউ তাঁকে ভালোবাসেনি। ঈশিকার চোখ থেকে জল না পড়লেও ভিতরে ভাঙন ধরেছিল। আসলে তিনিও যে একই পরিস্থিতির শিকার। ইংরাজিতে এম.এ.পাশ করার পর অভিনয় করতে চাইলে পাশ থেকে সরে গিয়েছিলেন মা-বাবা, বলেছিলেন, নিজের ক্ষমতায় যা খুশি করতে। প্রেমিক বলেছিলেন, তাঁকে বিয়ে করে সংসার করতে, কলকাতায় থেকে অভিনয় করতে। ঈশিকার পছন্দ ছিল বলিউড। কারণ টলিউডে নতুনদের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু প্রেমিক বলেছিলেন, বলিউড অথবা প্রেম, যেকোন একটা বেছে নিতে। বলিউডকেই বেছে নিয়েছিলেন ঈশিকা। প্রথমে অবহেলা করেছে বলিউড, তারপর শিখিয়ে নিয়েছে।
View this post on Instagram
ঈশিকার আফশোস নেই বিজ্ঞাপনে পরিচারিকার অভিনয় করে, সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করে। কারণ তিনি অভিনেত্রী। গুগল সার্চ বা উইকিপিডিয়া নিয়ে খুব একটা ভাবিত নন তিনি। অনুরাগ কাশ্যপ (Anurag Kashyap) বলেছেন, ঈশিকা জন্মগত অভিনেত্রী। ‘পরী’ ফিল্মে তাঁর অভিনয় করা অধিকাংশ দৃশ্য এডিটিং-এর সময় বাদ দিয়ে পরিচালক প্রষিত রায় (Prashit Ray) দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তাতে কিছু যায়-আসে না ঈশিকার। কান্নাগুলো জমিয়ে রেখেছেন, রাণুর চরিত্রে কাঁদবেন বলে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, প্রায় প্রত্যেক মেয়েই এক-একজন রাণু মন্ডল। তিনি দেবী নন, দানবীও নন। তিনি শুধুই রক্তমাংসের মানুষ। ‘মিস রাণু মারিয়া’-র শুটিংয়ের শেষে আবারও কমলিকার কাছে যাবেন ঈশিকা। কারণ সব কথা সবাইকে বলা যায় না।