নগেন্দ্র প্রসাদের জীবনী অবলম্বনে আসছে দেবের নতুন সিনেমা “গোলন্দাজ’, চিনে নিন সেই বাঙালিকে
মহান দার্শনিক ও ধার্মিক ব্যক্তি স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে যুব সম্প্রদায়ের চরিত্র গঠনের জন্য আছে দুটি সোপান এক গীতা পরে মানসিক শক্তি বৃদ্ধি অপরদিকে ফুটবল খেললে গড়ে উঠবে সুস্থ সবল শরীর। মানসিক বিকাশের জন্য গীতা পাঠের গুরুত্ব চলে আসছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই। কিন্তু প্রাচীন ভারতে ছিলোনা ফুটবল খেলার প্রচলন। ভারতে ফুটবল এসেছে সাহেবদের কাছ থেকেই।
ফুটবল ধীরে ধীরে জয় করে নিয়েছে বাঙালির মন। তাই আজ ইস্ট বেঙ্গল -মোহনবাগান ম্যাচ হলেই বাঙালি ভুগতে শুরু করে দেয় নস্টালজিয়ায়। বাঙালিদের কাছে ফুটবল খেলা সবার সেরা খেলা হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ হলো পরাধীনতার গ্লানি ও ইংরেজদের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে বিপ্লবীরা করছে সশস্ত্র আন্দোলন। আর সেই সময় ফুটবলের ময়দানে বাঙালি যখন ইংরেজদের পরাজিত করতো তখন তারা বোধ করতো এক আলাদা শান্তির অনুভূতি।
ফুটবলের ময়দানে ইংরেজদের হারিয়ে তারা পেতেন যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। তাই বাঙালির মনে প্রাণে ফুটবল নিয়ে রয়েছে এক আলাদা আনন্দের অনুভূতি। বাঙালির মনে এই ফুটবলের আবেগ সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি জাগরিত করেছেন তিনি হলেন নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী।
নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারীর জীবনী অবলম্বনেই সিনেমার পর্দায় আসতে চলেছে দেবের নতুন সিনেমা গোলন্দাজ। ‘গোলন্দাজ’ সিনেমায় দেব অভিনয় করতে চলেছেন নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারীর ভূমিকায়। ইতিমধ্যে সিনেমার টিজার সারা ফেলে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই টিজারে নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারীকে দেখা গেলো ইংরেজ দের চোখে চোখ রেখে চ্যালেঞ্জ জানাতে ।
এবার আসা যাক মূল প্রেক্ষাপটে, সেই সময়টা ছিল তখন ১৮৭৭ সাল, ফোর্ট উইলিয়ামের পাশেই ছিল সাহেবদের ‘ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাব’-আর সেই ক্লাবের মাঠে ইংরেজরা খেলতেন ফুটবল। সেদিন এক কিকেই বল চলে আসে ৮ বছর বয়সের এক বাচ্চা ছেলের কাছে। সে সেই সময় সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখছিলো সাহেবদের খেলা। আচমকাই তার পায়ের কাছে বল চলে আসায় সে অবাক হয়ে যায় আর সেই সময় এক ইংরেজ খেলোয়াড় তাকে বলে কিক করতে বলেন। আর সাথে সাথে সেই বলে কিক করেন ওই ছোট্ট বালক। বাংলাইর পায়ের সেটাই ছিল প্রথম ফুটবলের ছোয়া।
সেই ৮ বছরের ছেলেটি আর কেউ নন তিনি হলেন নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী।সেই বালক ফুটবলকে ভালোবেসে ফেলেন সেদিন আর বন্ধুদের নিয়ে তিনি গড়ে ফেলেন তার প্রথম ফুটবল টিম। বন্ধুরা মিলে বাজারে গিয়ে ফুটবল ভেবে কিনে নিয়ে আসেন রাগবি বল! আর সেই বল দিয়েই তারা মাঠে শুরু করে দেন খেলা। সেইসময় ছাত্রদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ দেখে এগিয়ে আসেন প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষক জি এ স্ট্যাক তিনি শুরু করে দেন সেই ছেলেদের ফুটবল কোচিং। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বাংলার প্রথম ফুটবল টিম আর সেই টিমে স্বাভাবিক ভাবেই ক্যাপ্টেন হিসেবে নির্বাচিত হন কিশোর নগেন্দ্র প্রসাদ।
তারপর থেকেই শুরু হয় বাংলায় ফুটবলের এক নতুন অধ্যায়। নগেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বেই তৈরী হয় ভারতে প্রথম ফুটবল সংগঠন “বয়েজ ক্লাব”। তার নেতৃত্বেই গড়ের মাঠে প্রথম বাঙালি ক্লাবের তাবু পরে। এরপর ১৮৮৭ সালে গড়ে তোলা হয় শোভাবাজার ক্লাব। আর এই শোভাবাজার ক্লাঙ্ ভারতে প্রথম ফুটবল প্রতিযোগিতা ‘ট্রেডস কাপ’এ অংশগ্রহণ করে।
১৮৯২ সালে শোভাবাজার ক্লাব নগেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে ইংরেজদের শক্তিশালী ক্লাব ‘ইস্ট সারে’কে পরাজিত করে। সেদিন বাংলাইর মনের জোরের কাছে হেরে যায় ইংরেজরা। আর সেদিনিই ছিল বাংলার মাঠে ইংরেজ খেলোয়াড়দের প্রথম হার। তারপর ১৯১১ সালে মোহনবাগানের শিল্ড জয় যা বাংলার ফুটবলের ইতিহাসে লেখা আছে স্বর্ণাক্ষরে।