৯২ বছরের লাইফ জার্নিতে চিরকুমারী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর, কিন্তু কেন?
লতা মঙ্গেশকরের চিরপ্রস্থানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে হাজারো গানের কোকিলকণ্ঠী এ শিল্পী বহু বছর কোটি কোটি শ্রোতা-ভক্তদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন তার কণ্ঠের মহিমায়। হয়তো এভাবেই আরও বহুকাল তার গান রয়ে যাবে মানুষের হৃদয়ে। নিজের ভেতরে নিজেকে লুকিয়ে রাখার অভ্যস্থতা নিয়েই জীবন কাটিয়েছেন সঙ্গীতের এ সাক্ষাৎ সারস্বত। কিন্তু নিজের জীবনকে কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করেননি। ৯২ বছরের লাইফ জার্নিতে তিনি ছিলেন চিরকুমারী।
চারপাশের এত এত সফলতার ভিড়েও ব্যক্তিজীবনে লতা মঙ্গেশকরের একা থাকার কী কারণ? এ প্রশ্ন ও কৌতুহল তার ভক্ত-অনুরাগীদেরই। অবিবাহিত থেকে যাওয়া লতা একতরফাভাবে কেবলই কি সুরের সাধনায় নিজেকে খুঁজতে চেয়েছেন? সংসার ধর্মে কেন মন দিলেন না? কেন তিনি চিরকাল অবিবাহিত রয়ে গেলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর সবার মনেই আসে, সেটাই স্বাভাবিক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, গুঞ্জন ছিল লতা মঙ্গেশকর একসময় কাউকে ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু তার সেই ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি। প্রেমে সফল হননি বলেই কারও সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধাও হয়নি তার। এমনও শোনা যায়, রাজস্থানের (তৎকালীন রাজপুতনা) দুঙ্গরপুরের রাজ ঘরানার মহারাজ রাজ সিং-এর প্রেমে পড়েছিলেন লতা। যিনি সম্পর্কে লতার বড়ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
জীবনে প্রেম এসেছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তা পরিণতি পায়নি। রাজ ঘরানার ছেলে রাজ সিং নাকি বাবা-মাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, কোনো সাধারণ ঘরের মেয়েকে তিনি রাজবংশের বউ করে আনবেন না। সেই প্রতিজ্ঞা বজায় রেখেছিলেন রাজ সিং। তিনি কখনো বিয়েই করেন নি। লতার থেকে ৬ বছরের বড় রাজ সিং আদর করে লতাকে মিট্টু বলে ডাকতেন আর পকেটে সবসময় একটি রেকর্ডার নিয়ে ঘুরতেন। সেই রেকর্ডারের মধ্যে রেকর্ড করা থাকতো লতা মঙ্গেশকরের বিখ্যাত কিছু গান। ২০০৯ সালে প্রয়াত হন রাজ সিং। তবে রাজ সিং ছাড়া লতার দীর্ঘ জীবনে কখনো আর কারও সঙ্গে তার নাম জড়ায়নি।
শচীন দেব বর্মনের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর
চিরকুমারী থাকার কারণ হিসেবে রাজ সিংয়ের প্রেমে পড়ার বিষয়টি সামনে আনা হলেও লতা মঙ্গেশকরের দাবি ভিন্ন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তার ভাষ্য ছিল, সংসারের দায়িত্ব কাঁধে থাকার কারণেই তিনি নিজেকে নিয়ে কোনোদিন আলাদা করে ভাবার সুযোগ পাননি।
লতা-আশা ভোঁসলের বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর মাত্র ৪২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। এরপরই সংসারের ওপর ঘোষ অন্ধকার নেমে আসতে থাকে। কে ধরবে সংসারের হাল? এ চিন্তায় লতার মা সুধামতী দিশেহারা। শেষ পর্যন্ত দায়িত্বটা এসে পড়লো ১২ বছরের মেয়ে লতার কাঁধে। বাবার মৃত্যুর মাত্র সাতদিন পরই শোক লুকিয়ে লতা গেলেন ‘প্যাহলি মঙ্গলাগাঁও’ ছবির শুটিংয়ে। মারাঠি এ ছবিটিতে অভিনয় করে আর গান গেয়ে ক্যারিয়ার শুরুর পাশাপাশি জীবনসংগ্রামটাও শুরু করেন কিংবদন্তি এ শিল্পী।