’12th Fail’-পরিচালককে দেখেই কাঁদলেন বাস্তবের আইপিএস অফিসার মনোজ
গত দুর্গাপূজার ঠিক পরপর মুক্তি পেয়েছিল ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা। প্রথমে বক্স অফিসে তেমন সাড়া পায়নি বিধু বিনোদ চোপড়া পরিচালিত সিনেমাটি। তবে, সম্প্রতি ওটিটিতে মুক্তি পাওয়ার পর হইচই ফেলে দিয়েছে এই সিনেমা। সর্বমহলে আলোচনায় উঠে এসেছে এই সিনেমার গল্প থেকে অভিনয়।
সবাই জানেন যে, সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে টুয়েলভথ ফেল সিনেমা। এ সিনেমা যার জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে, সেই মনোজ কুমার শর্মার সঙ্গে দেখা করেছিলেন পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া। তাদের সেই সাক্ষাতের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন পরিচালক।
সেই ভিডিওতে আইপিএস অফিসার মনোজ কুমার শর্মার সঙ্গে তার স্ত্রী আইআরএস অফিসার শ্রদ্ধা যোশীকেও দেখা গেছে। সিনেমাটির স্ক্রিপ্ট রিডিং সেশনের সময় তাদের দেখা হয়েছিল। তখন পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়াকে দেখেই কেঁদে ফেলেন মনোজ কুমার শর্মা।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মনোজ কুমার শর্মা যখন কাঁদছেন, তখন তাকে জড়িয়ে ধরে আছেন পরিচালক। মনোজ কুমার শর্মা যে কেবল এই সিনেমাটি বানানোর ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন এমনটা নয়। তিনি বাস্তবেও অনেককে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
টুয়েলভথ ফেল সিনেমাটিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, আশা, প্রত্যাশা, মন দিয়ে পড়াশোনা করা, চেষ্টা এবং হাজারো প্রতিকূলতার পর লক্ষ্য পূরণের গল্প উঠে এসেছে। সিনেমাটিতে আইপিএস অফিসার মনোজ কুমার শর্মা এবং আইআরএস অফিসার শ্রদ্ধা যোশীর গল্প বলা হয়েছে।
অল্প বাজেটের এই সিনেমাটি গত বছরের ২৭ অক্টোবর বড় পর্দায় মুক্তি পায়। এর দুই মাস পর গত ২৯ ডিসেম্বর ওটিটি প্লাটফর্ম ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তি দেওয়া হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় সিনেমার কিছু দৃশ্য। জীবনের গল্পটি নাড়া দেয় সিনেমা প্রেমীদের। এই সিনেমায় নিজেকে খুঁজে পান অনেকেই। এরপর যা হওয়ার তাই হয়েছে; ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমাটি দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন দর্শকেরা। ২০২৩ সালে বলিউডের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমাগুলোর মধ্যে জায়গা করে নেয় সিনেমাটি।
ভারতের আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ শর্মা ও আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশি দম্পতির জীবনের গল্প নিয়ে ২০১৯ সালে ‘টুয়েলভথ ফেল’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন দেশটির ঔপন্যাসিক অনুরাগ পাঠক। সেই উপন্যাস অবলম্বনে ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা নির্মাণ করেন বিধু বিনোদ চোপড়া।
বাস্তব জীবনে আর্থিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা সঙ্গী করে বেড়ে ওঠেন মনোজ। পরিবারকে সহযোগিতা করতে পড়াশোনার পাশাপাশি অটো রিকশাও চালাতেন তিনি। মাধ্যমিকে কোনোরকম পাস করলেও দ্বাদশ শ্রেণিতে হিন্দি ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছিলেন তিনি। পরেরবার অনেক কষ্টে দ্বাদশ পাস করেন।
এর মধ্যেই একবার এক পুলিশ কর্মকর্তা মনোজর অটোটি আটক করেন। পরে থানায় গিয়ে অটোটি ছাড়িয়ে আনতে যান তিনি। সেখানে একটি সাক্ষাৎ বদলে দেয় তার জীবনের প্রথম গতিপথ। কীভাবে ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় সবকিছু ওই আলোচনায় উঠে আসে। এরপর মনজ স্বপ্ন বুনেন আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার।
ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন চেপে বসে মধ্য প্রদেশের এই দ্বাদশ ফেল ছেলেটির মাথায়। পাড়ি দেন গোয়ালিয়র। প্রথমটায় টেম্পো চালিয়ে, ছোট-খাটো কাজ করে লড়াই শুরু করেন তিনি। সে সময় তার মাথার উপর ছাদটুকুও ছিল না। ফুটপাথে ভিখারিদের সঙ্গে ঘুমাতে হয়েছে মনোজকে। একটা সময় লাইব্রেরিতে পিয়নের কাজ পান তিনি। কাজের সূত্রে বই পড়ার সুযোগ পেয়ে যান । সেটাই তাকে নতুন দিশা দেখায়। ধীরে ধীরে ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।
সেই থেকে শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে মধ্য প্রদেশ থেকে দিল্লিতে পৌঁছান মনোজ। সেখানে ধনী পরিবারের কুকুরদের দেখভালের মতো কাজও করতে হয়েছে তাকে। তবে লড়াই বন্ধ হয়নি। এই লড়াইয়ের যাত্রায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেটির জীবনে আসে উত্তরাখন্ডের মেয়ে শ্রদ্ধা জোশি। তার সব সময়ের সঙ্গী ছিলেন প্রেমিকা শ্রদ্ধা। তিনিও চাকরির পরীক্ষা দিতে দিল্লি যান। প্রথমবারেই আইআরএস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান শ্রদ্ধা।
View this post on Instagram
তিনবারের চেষ্টায়ও উত্তীর্ণ হতে পারেননি মনোজ। শ্রদ্ধার অনুপ্রেরণায় চারবারের চেষ্টায় আইপিএস এর চাকরিটা পেয়ে যান তিনি। ২০০৫ সালে মনোজ শর্মাকে বিয়ে করেন বিয়ে করেন শ্রদ্ধা। বর্তমানে এই দম্পতির ঘরে চিয়া ও মানস নামের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
জানা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমাটি ইতোমধ্যে ৬০ কোটির বেশি টাকা ব্যবসা করেছে। ছবিটি নির্মাণে ব্যয় হয় মাত্র ২০ কোটি টাকা । এ সিনেমায় মনোজ চরিত্রে বিক্রান্ত ম্যাসি ও শ্রদ্ধা চরিত্রে অভিনেত্রী মেধা শংকর অভিনয় করেন।