“২৬ হাজার চাকরি বাতিলের জন্য মুখ্যমন্ত্রী দায়ী”, মমতাকে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর

প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের ঘটনায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার বিধানসভার বাইরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট ভাষায় অভিযোগ করেন যে রাজ্য সরকার একাধিকবার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা জমা দেয়নি।
চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করার আবেদন জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনকি প্রয়োজনে বিজেপি বিধায়কদের বেতন থেকে আইনজীবীর খরচ বহন করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেন।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি ইন্ডোরের সভায় বলেছেন ২৬ হাজারের মধ্যে ৭ হাজার যোগ্য প্রার্থীকে প্রবেশ করানো হয়েছে। তিনি যোগ্যদের পাস দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। তাহলে এতেই স্পষ্ট কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য।” তিনি আরও বলেন, “আজকে এসএসসি যে রিভিউ পিটিশন করেছে, তাতে অবিলম্বে যোগ্যদের তালিকা আদালতে পেশ করা হোক।”
তালিকা জমা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “রাজ্য সরকারের কাছে এখনও সুযোগ রয়েছে, অবিলম্বে তালিকা প্রকাশ করুন। অন্যথায় বাকি ১৯ হাজার চাকরিহারাদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হবে। আগামী ১৫ই এপ্রিলের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এই তালিকা জমা না দিলে ২১শে এপ্রিল নবান্ন অভিযান করা হবে। সেদিন দলের পতাকা ছেড়ে অরাজনৈতিকভাবে চাকরিহারাদের স্বার্থে নবান্নের সামনে ধরনায় বসব। প্রয়োজনে চেয়ার থেকে নামিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করব।”
শুভেন্দু অধিকারী আরও জানান, চাকরিহারাদের আপত্তি না থাকলে তিনি ১ লক্ষ লোক নিয়ে নবান্ন অভিযানে যোগ দেবেন। তিনি অভিযোগ করেন যে মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে আক্রমণ করেছেন।
এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বাম ও বিজেপিকে নিশানা করে ‘মুখ ও মুখোশ’ চেনার কথা বলেন। এর পাল্টা জবাবে বিধানসভার বাইরে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “আসল মুখোশ মুখ্যমন্ত্রী, আর মুখ হল অভিষেক, যিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে এই চাকরি বিক্রি করেছেন। এই দুর্নীতির পিছনে যে অর্থ রয়েছে, তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ৭৩ মিনিটের অডিও ক্লিপে বহুবার অভিষেকের নাম উল্লেখ করেছেন।”
বিরোধী দলনেতার আরও অভিযোগ, “সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার ১৬ বার শুনানি হয়েছে। একাধিকবার আদালত যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার একবারও সেই তালিকা জমা দেয়নি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। মুখ্যমন্ত্রী এসএসসি-র স্বায়ত্তশাসন শেষ করে দিয়েছেন। সরকার এসএসসিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়নি। সিবিআই তদন্তের কারণেই কিছু যোগ্য প্রার্থী নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছেন। না হলে সমাজের আরও বড় বিপর্যয় ঘটত।”
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সরকারে এলে এক মাসের মধ্যে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করে দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কারও চাকরি যাবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় শুভেন্দু বলেন, “চাকরিহারাদের সিভিক টিচার করে দেওয়া হবে, ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে – এটাই কি সরকারের প্ল্যান বি বা সি? আমরা প্ল্যান এ চাই। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় মেনে নিলে আজ এই ১৯ হাজার শিক্ষকের এই দুরবস্থা হত না।”
এদিন শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার বাইরে “চোর চোর চোরটা, অভিষেকের পিসিটা” স্লোগান দেন। সাংবাদিক বৈঠকের আগে শুভেন্দু বলেন, “৭ হাজার কার্ড দেওয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্যে যারা রয়েছেন, তাঁরাই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট লুঠের কাজ করেছে। অযোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের দিয়েই সেই কাজ করানো হয়েছে।”