‘হতাশ’ জেলেনস্কি কি তবে কি হার মানছেন পুতিনের কাছে?জেনেনিন বিস্তারিত
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের আজ ১৪ দিন। এই দু’সপ্তাহে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বারবার বলে এসেছেন, তার দেশ ও দেশের জনগণ কোনোভাবেই আক্রমণকারীদের কাছে হার মানবে না, প্রাণ দিয়ে হলেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। তাদের এই আত্মবিশ্বাসের বড় উৎস ছিল মূলত পশ্চিমাদের ওপর ব্যাপক ভরসা। কিন্তু সেই আশা আজ অনেকটাই হতাশায় পরিণত হয়েছে ইউক্রেনীয়দের কাছে।
রাশিয়া আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো দেশগুলো সৈন্য-সামন্ত নিয়ে এগিয়ে আসবে বলে ধারণা ছিল ইউক্রেনের। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি। ন্যাটো পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না। এমনকি, রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের আকাশে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা দিতেও আপত্তি জানিয়েছে পশ্চিমা এই সামরিক জোট।
এখন পর্যন্ত রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ আর মস্কোর ওপর বড় বড় নিষেধাজ্ঞা দিয়েই ক্ষান্ত পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু লড়াই করার মতো সৈন্য না থাকলে শুধু অস্ত্র দিয়ে কী হবে, তা হাঁড়ে হাঁড়ে বুঝতে পারছেন ইউক্রেনীয়রা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে একাই লড়তে হচ্ছে ইউক্রেনকে। কথিত মিত্রদের কাছ থেকে এর বেশি পাওয়ার আশা আজ হতাশায় পরিণত হয়েছে। সেই সুর শোনা গেছে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মুখেও।
সোমবার (৭ মার্চ) রাতে এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ন্যাটোয় ঢোকার জন্য আর জোর দিচ্ছে না, তাদের এই জোটে ঢোকার আগ্রহ কমে গেছে। শুধু তা-ই নয়, ইউক্রেনের যে দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলকে রাশিয়া স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে, কিয়েভ প্রশাসন তা নিয়েও আপস করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
এদিন পশ্চিমাদের তীব্র সমালোচনা করে তিনি অভিযোগ করেছেন, ন্যাটো ইউক্রেনকে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। এই জোট বিতর্কিত বিষয় ও রাশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষে ভয় পায়।
রাশিয়া-ইউক্রন যুদ্ধে ন্যাটোর সংযমী ভূমিকা নিয়ে এর আগেও প্রশ্ন তুলেছিলেন জেলেনস্কি। রুশ আক্রমণ ঠেকাতে ইউক্রেনের আকাশসীমায় ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ন্যাটো। পশ্চিমাদের দাবি, ইউক্রেনে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করলে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর সরাসরি সংঘাত লেগে যাবে এবং তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা রয়েছে।
ন্যাটোর এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি অভিযোগ করেছেন, নো ফ্লাই জোন ঘোষণা না করে রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনে বোমা হামলা চালিয়ে যাওয়ার সবুজ সংকেত দিয়েছে ন্যাটো। তাই এখন থেকে সংঘাতে তার দেশে যত মানুষ মারা যাবে, তার জন্য আংশিকভাবে পশ্চিমারাও দায়ী থাকবে।
পশ্চিমা সামরিক জোটের সঙ্গে ইউক্রেনের এই দূরত্ব মস্কোর জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। কারণ তারা ইউক্রেন আক্রমণ করেছে মূলত ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান ঠেকানো ও রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিরাপত্তার ‘অজুহাতে’।
রাশিয়া শুরু থেকেই বলে আসছে, তারা চায় না ইউক্রেনসহ সাবেক সোভিয়েত দেশগুলো ন্যাটোর সদস্য হোক। এটি হলে ‘শত্রুভাবাপন্ন’ পশ্চিমাদের সমরাস্ত্র রাশিয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে বলে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মস্কো। তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশকে সদস্য করেছে ন্যাটো।
ইউক্রেনও বহু বছর ধরে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছে। জোটের পক্ষ থেকে কিয়েভকে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও বিষয়টি এখনো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এছাড়া, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর আগে দেশটির রুশপন্থি দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি চান, ইউক্রেন সরকারও বিষয়টি মেনে নিক।
রাশিয়ার এই দাবি প্রসঙ্গে সোমবার জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তার কথায়, এ দুটি অঞ্চলকে রাশিয়া ছাড়া আর কেউ স্বীকৃত দেয়নি, এগুলো ‘ছদ্মবেশী প্রজাতন্ত্র’। তবে আমরা আলোচনা করতে পারি এবং এসব অঞ্চল কীভাবে থাকবে, তা নিয়ে সমঝোতা করতে পারি।
শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে থাকার চেয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করাই ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের কাছে ভালো মনে হচ্ছে। তার এমন নমনীয় অবস্থানে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধ সমাপ্তিতে নতুন আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন অনেকে।