আপনি কি জানেন মানুষ কেন জুয়া খেলে? দেখেনিন যা বলছে গবেষণা
জুয়া এবং নেশা— এই শব্দ দু’টি পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। অর্থাৎ সময় মতো নিয়ন্ত্রিত না হলে জুয়া খেলার প্রবণতা পৌঁছে যেতে পারে আসক্তিতে। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৬ সাল থেকে গোটা বিশ্ব জুড়ে মানুষ যে পরিমাণ অর্থ জুয়া খেলায় হারিয়েছেন, তার পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার!
কোভিডের মধ্যে আরো বেড়েছে জুয়া খেলার প্রবণতা। বিশেষত নেটমাধ্যমে একাধিক খেলায় প্রচুর পরিমাণ টাকা ঢালছেন মানুষ। জুয়া খেলার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি এশিয়াতে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকা।
ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, জুয়ার নেশা মদ বা ধূমপানের নেশার মতো নয়। বাইরে থেকে দেখে এর উপসর্গগুলোর আন্দাজ পাওয়াও কার্যত অসম্ভব। কিন্তু জুয়ার নেশা ডেকে আনতে পারে গুরুতর মানসিক সমস্যা। বিশেষত দাম্পত্য ও সামাজিক জীবনের জুয়ার নেশা অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। জুয়ার নেশা জন্ম দিতে পারে অপরাধ প্রবণতাও।
গবেষকরা একটি কৃত্রিম পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন বয়সি মানুষদের মধ্যে জুয়া খেলার প্রবণতার তুলনামূলক আলোচনা করেছিলেন। এতে দেখা যায়, ১৭ থেকে ২৭ বছর বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে জুয়া খেলার প্রবণতা সর্বাধিক। কিন্তু অল্প সময়ে লাগাম না টানলে বয়সের সঙ্গে বাড়তে থাকে জুয়া খেলার প্রবণতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে মানব মস্তিষ্কের ভেন্ট্রোমিডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, অর্বিটাল ফ্রন্টাল কর্টেক্স ও ইনসুলা অংশ এই প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে যারা নিয়মিত জুয়া খেলেন তাদের মস্তিষ্কের এই অংশগুলোতে অধিক তৎপরতা দেখা যায়। এছাড়া মস্তিষ্কে ডোপামাইন নামক এক প্রকার নিউরোট্রান্সমিটার থাকে, যা স্নায়ুসংবেদ পরিবহণ করে। পুরস্কারের প্রতি আসক্তির অনুভূতি তৈরি হয় এই উপাদানটির জন্যই। জুয়ায় আসক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোনো কিছু লাভ হওয়ার পর যখন মস্তিষ্কে ডোপামাইন ক্ষরিত হয় তখন তাদের উত্তেজনা তৈরির অনুপাত সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি হয়। ফলত তারা সামান্য লাভেই অনেক বেশি উত্তেজিত হন ও পুনরায় আরো বেশি বাজি ধরতে উদ্যত হন।
বর্তমানে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যে ব্যবস্থা নেয়া হয় তাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে বিহেভিয়রাল কগনিটিভ থেরাপি। পাশাপাশি দলগত ভাবে একসঙ্গে থাকার মধ্যে দিয়েও এই সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। এছাড়াও কয়েকটি বিশেষ ধরনের ওষুধ রয়েছে যা পুরস্কার প্রাপ্তির উত্তেজনাকে প্রশমিত করে ও এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
বর্তমানে ব্রিটেনে জুয়ার নেশা কমানোর জন্য একটি সামগ্রিক চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করা হচ্ছে। আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে জুয়ার চেহারা বদলে গিয়েছে। বর্তমানে ঘরে বসেই মোবাইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের জুয়ায় অংশ নেয়া যায়। কাজেই যদি দেখা যায় যে, কারো এই ধরনের খেলার প্রতি আসক্তি তৈরি হচ্ছে, তবে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।