আন্তর্জাতিক

RUSHvsUKR: রুশ সৈন্যদের তেল, গুলি ও খাদ্যও ফুরিয়ে যাচ্ছে, মাতৃভূমি রক্ষায় জোর লড়াই করছে ইউক্রেনীয়রা

ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ভ্লাদিমির পুতিন যেমনটা ভেবে রেখেছিলেন, সেরকমটাই হয়েছে বা হচ্ছে বলে পাঁচ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও মনে হচ্ছে না।

সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রে রাশিয়ার তুলনায় অনেক কম শক্তিধর ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীর দিক থেকে রুশরা ‘ধারণার চেয়েও কড়া’ প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছেন বলে পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কয়েকদিন ধরেই তাদের ব্রিফিংয়ে বলে আসছেন।

রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি; রোববার ইউক্রেইনের বাহিনী তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিমানঘাঁটি দখলে রাশিয়ার চেষ্টা সফলতার সঙ্গে প্রতিহত করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।

ইউক্রেইনের বাহিনী ও বেসামরিকদের তুমুল প্রতিরোধের পাশাপাশি রুশ বাহিনীকে রসদ সমস্যারও মোকাবেলা করতে হচ্ছে; অগ্রবর্তী সেনাদের তেল, গুলি ও খাদ্যও ফুরিয়ে যাচ্ছে।

“তাদের সমস্যা হচ্ছে। তাদের ডিজেলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তারা খুবই শম্ভুকগতিতে এগুচ্ছে, এখানে নৈতিকতাও একটা ব্যাপার অবশ্য,” রুশ বাহিনী নিয়ে নেটো গোয়েন্দা তথ্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন জোটটির একজন কর্মকর্তা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রোববার বলেছেন, রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেইন অভিযানের জন্য বরাদ্দ তার মোট যুদ্ধশক্তির দুই-তৃতীয়াংশকে ব্যবহার করেছে; আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা প্রস্তুত রেখেছে।

সোমবার প্রায় ৪০ মাইল দীর্ঘ রুশ সামরিক যানের একটি বহর ইউক্রেইনের রাজধানী অভিমুখে রওনা হয়েছে; বেলারুশও রাশিয়ার সঙ্গে আক্রমণে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে কিয়েভের গোয়েন্দারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, জানিয়েছেন ইউক্রেইনের একজন কর্মকর্তা।

এত কিছুর মধ্যেও ইউক্রেইন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা সোমবার বেলারুশ সীমান্তে বৈঠকে বসেছিলেন; সেখানকার আলোচনায় ইউক্রেইন ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’ ও ‘রুশ বাহিনী প্রত্যাহারের’ চাপ দিলেও এমনটা সহসা ঘটবে বলে কার্যত কেউই আশা করছে না।

তবে পুতিন যে কেবল ইউক্রেইনের নিজেকে রক্ষার সক্ষমতা নিয়ে ভুল ধারণা করেছিলেন, তা নয়; হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার ওপর কতটা কঠোর হতে পারে, তাও তিনি আগে থেকে ধারণা করতে পারেননি বলেই মনে হচ্ছে।

ইউক্রেইনের ক্রিমিয়া দখল, সিরিয়ার শাসককে সমর্থন এবং অন্য দেশগুলোতে আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের পরও গত কয়েক বছরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পশ্চিমা দেশগুলোর দিক থেকে খুব বড়সড় চাপে পড়েননি।

তারা পুতিন ও শাসনকাঠামোর নিন্দা জানিয়ে কড়া কড়া কথা বললেও এখনও রাশিয়ার কাছ থেকেই গ্যাস কিনছে, যা রাশিয়ার ধনীদের শ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছে এবং মস্কোর সঙ্গে তুলনামূলক স্বাভাবিক সম্পর্কই বজায় রেখেছে।

এবারও শুরুর দিকে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠলেও, পরের দিকে তাদের কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা পুতিনকে সাধারণত দেখা যায় না এমন ঐক্যবদ্ধ পশ্চিমা যুথবদ্ধতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

এমনিতেই ধুঁকতে থাকা রুশ অর্থনীতি থেকে শুরু করে খেলাধুলার অঙ্গন পর্যন্ত নজিরবিহীন এসব নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে মস্কোকে দেয়ালের দিকে ঠেলছ; রাশিয়ার আন্তর্জাতিক পরাশক্তির ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

সময় যতই গড়াবে দেশটির অর্থনীতির সংকট তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হবে। সোমবার সন্ধ্যায় ডলারের বিপরীতে রুবল ২০ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে গেছে, এ পদক্ষেপও শিগগিরই রুশ নাগরিকদের পকেটে আঘাত হানবে।

ওই নাগরিকরাও হয়তো দ্রুতই উপলব্ধি করতে পারবেন, কেন পুতিন একটা যুদ্ধের জন্য এতটা ঝুঁকি নিতে গেলেন, যার দরকারই ছিল না।

সোমবার রাশিয়া-ইউক্রেইন যে আলোচনা শুরু হয়েছে তা শিগগিরই উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখবে তার আশা কম; শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা আলোচনায় যুদ্ধ অল্প সময়ে শেষ হবে, তেমন সম্ভাবনাও দেখছে না কেউ।

এতখানি যাওয়ার পর পুতিনও এত সহজে ইউক্রেইনকে ছেড়ে দেবেন, তেমনটা মনে হচ্ছে না।

তবুও যুদ্ধ দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়াচ্ছে। পুতিনের সাজানো গুছানো পরিকল্পনা যে এতটা প্রতিরোধের মুখে পড়বে তা সম্ভবত তার পাশাপাশি তার অনেক প্রতিদ্বন্দ্বীও কল্পনা করতে পারেননি।

Back to top button