সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে আনিস কান্ড নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। আর এবার আনিসকাণ্ডের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে আমতা থানার ৩ পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রশাসন আমতা থানার এএসআই নির্মল দাস, কনস্টেবল জিতেন্দ্র হেমব্রম ও হোমগার্ড কাশীনাথ বেড়ার বিরুধ্যে নিয়েছে কড়া পদক্ষেপ।
তাদের বিরুধ্যে অনিস্কাষনের পরিবারের লোকেদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে আনিস খানের মৃত্যুর ৩ দিন কেটে যাবার পরেও কোনোরকম ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ।
প্রসঙ্গত,গভীর রাতে পুলিশ পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে একজন ছাত্রনেতাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার আমতা থানা এলাকায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আমতার সারদা দক্ষিণ খাঁ-পাড়ায়।
পুলিশ বলেছে, নিহতের নাম আনিস খান (২৮)। পুলিশের পোশাকে বাড়িতে গিয়ে আনিসকে তিন তলার ছাদ থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার।
তবে আমতা থানার দাবি, তারা ওই বাড়িতে কোনো পুলিশ পাঠায়নি। পুলিশের পোশাকে কারা সেখানে গিয়েছিল তা নিয়ে রহস্য বাড়ছে।
নিহত আনিসের পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে পুলিশের পোশাক পরে চারজন লোক আসেন তাদের বাড়িতে। ওই লোকদের মধ্যে তিনজন সিভিক ভলান্টিয়ার ও এক জন খাকি পোশাকে ছিলেন। খাকি পোশাকে থাক ব্যক্তি নিজেকে আমতা থানার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আনিসের বাবাকে আটকে রাখেন। অন্যরা আনিসকে নিয়ে তিনতলায় চলে যান। তার পর ছাদ থেকে কিছু পড়ার শব্দ পান পরিবারের লোকজন।
নিহতের পরিবার বলেছে, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আনিস কলকাতায় থাকতেন। তিন দিন আগে বাড়িতে ফিরেছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় পাড়ার একটি জলসায় গিয়েছিলেন। পরে গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফেরার কিছু ক্ষণ পর চারজন ওই বাড়িতে আসেন। তাদের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাক পরা থাকলেও বাকিদের শরীরে জলপাই রঙের পোশাক ছিল।
রাত ১টার সময় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গ্রিল ধরে জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছিলেন ওই ব্যক্তিরা। আওয়াজ শুনে আনিসের বাবা গেটের সামনে এসে তাদের পরিচয় জানতে চান। তখন তারা নিজেদের আমতা থানার পুলিশ হিসেবে দাবি করেন। আনিসকে খুঁজতে এসেছেন বলেও জানান।
দরজা খোলার পর আনিসের বাবাকে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তি বন্দুক দেখিয়ে সেখানেই আটকে রাখেন। এর পর বাকি তিন জন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা সিঁড়ি দিয়ে তিন তলায় উঠে যান। তিন তলার সিঁড়ির ঘরের বারান্দার সামনে চৌকিতে বসে ছিলেন আনিস। তারা উপরে গিয়ে আনিসকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন এবং তিন তলার বারান্দা থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে দেন।
আনিসের পরিবারের দাবি, কিছু ক্ষণ পর সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নীচে নেমে ওই পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করে বাকি তিন জন বলেন, ‘স্যার কাজ হয়ে গেছে। ’ এরপর দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তারা।
পরিবারের অন্যান্যরা ছুটে গিয়ে দেখেন মাটিতে পড়ে আছেন আনিস। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়।
ভারতে নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ‘কলকাতার শাহিনবাগ’ পার্ক সার্কাসের মাঠে নিয়মিত দেখা যেত আনিসকে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র-নেতা লিখতেন, ‘আমার রক্ত দিয়ে সংগ্রামী ব্যানার লেখা হবে!’
সেই তরুণের নৃশংস খুনের অভিযোগ ওঠায় শনিবার দফায় দফায় প্রতিবাদে সরব হয়েছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাগরিক সমাজের একাংশও আন্দোলনে যোগ দেন।
ফলে, সন্ধ্যায় পার্ক সার্কাস মোড়ে কিছুক্ষণের জন্য অবরোধের জেরে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। অবশ্য পুলিশের দাবি, শনিবার সন্ধ্যায় রাস্তায় ভিড় এমনিতেই কম থাকায় বিক্ষোভের প্রভাব বেশি পড়েনি।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোকিম শেখ বলেছেন, সিএএ বিরোধী আন্দোলনের অক্লান্ত সৈনিক ছিল আনিস। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শত্রু ছিল না। তাকে কেউ এভাবে খুন করতে পারে, ভাবতে পারছি না।
গতকাল পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। রাত ৯টা নাগাদ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। তবে রাত পর্যন্ত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরে ক্ষুব্ধ ছাত্র এবং প্রতিবাদীরা জমায়েত ছিলেন। সাদা পোশাক এবং উর্দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশও ঘটনাস্থলে মজুত ছিল।