এক কাঁঠালের দাম ১৫০০০ টাকা! কিনতে গিয়ে চমকে যাচ্ছে ক্রেতারা? জেনেনিন কোথায় ?
লন্ডনের পুরোনো এবং বড় একটি বাজার ‘বারা মার্কেট’। সেখানেই একটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ পাউন্ডে (২১৮ ডলার)। বিষয়টি রীতিমত সাড়া ফেলে দেয় ইন্টারনেট দুনিয়ায়। একটা কাঁঠালের দাম এত হতে পারে? এতে টুইটারে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। রসিকতা করে কেউ কেউ লিখেছেন, এবার তারা লন্ডনে গিয়ে কাঁঠাল বিক্রি করে কোটিপতি হয়ে যাবেন। কিন্তু কেন এত দাম?
ব্রাজিলের বহু জায়গাতেই মাত্র এক ডলার দশ সেন্টে কাঁঠাল কিনতে পাওয়া যায়। কেবল ব্রাজিল নয়, বিশ্বের অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশেই কাঁঠাল বেশ সস্তায় কেনা যায়। অনেক দেশে তো একেবারে বিনা মূল্যে গাছ থেকে পেড়ে কাঁঠাল খাওয়া যায়। বেশিরভাগ কাঁঠাল আসলে রাস্তাতেই পঁচে নষ্ট হয়, অন্তত ব্রাজিলে তো বটেই।
তাহলে লন্ডনে একটি মাত্র কাঁঠালের এত বেশি দাম হাঁকানোর কারণ কী?
প্রথমত, কোন জিনিস কোথায় বিক্রি হচ্ছে, তার ওপরে আসলে নির্ভর করে এর দাম। এটা যে কোনো জিনিসের বেলায় সত্য।
ব্রাজিলেও কিন্তু কাঁঠালের দামের হেরফের আছে। এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে আপনি বিনামূল্যে এটি গাছ থেকে পেড়ে নিতে পারেন। কিন্তু অন্য অনেক জায়গায় কিন্তু আবার এই কাঁঠালের অনেক দাম।
তবে লন্ডনে একটি কাঁঠালের দাম কেন এত বেশি, তার আরো অনেক কারণ আছে। কাঁঠালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বেশ জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা এর বেশ কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করছেন। যেমন, কাঁঠাল বেশ দ্রুত পঁচে যায়। এটি কেবল একটি মৌসুমে হয়। আর ফল হিসেবে কাঁঠালের আকৃতি বেশ বড়। কাঁঠাল বেশ ভারী, খুব দ্রুত পেকে যায়। ফলে সুপার মার্কেটে এর ‘শেলফ-লাইফ’ একেবারেই সংক্ষিপ্ত।
যেসব দেশে কাঁঠাল হয়, সেসব দেশেও যে এটি খুব আদৃত, তা নয়। কিন্তু সম্প্রতি উন্নত দেশগুলোতে কাঁঠালের বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে। এর পেছনে আছে নিরামিষাশীরা, যারা এখন মাংসের বিকল্প হিসেবে কাঁঠাল বেশ পছন্দ করে।
কাঁঠাল যখন রান্না করা হয়, তখন এটি খেতে অনেকটা অনেকটা গরু বা শুকরের মাংসের মতো লাগে। ফলে টফু বা কর্নের মতো এটিও এখন মাংসের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কাঁঠাল যখন খুব বেশি পেকে যায়, এবং এটি ঘটে বেশ দ্রুত, তখন কিন্তু এটি খেতে বেশ মিষ্টি এবং কেবল মিষ্টি খাবার তৈরির কাজেই ব্যবহার করা যায়। কাজেই ভোক্তাদের জন্য সস্তায় কাঁঠাল পাওয়ার আরেকটা উপায় হচ্ছে, টিনজাত কাঁঠাল কেনা।
ব্রিটেনের সুপারমার্কেটে এক টিন কাঁঠালের দাম প্রায় চার ডলার। কিন্তু অনেকে বলেন, টিনজাত কাঁঠাল খেয়ে আসল কাঁঠালের স্বাদ পাওয়া যায় না।
কাঁঠাল যেহেতু আকারে অনেক বড়, তাই এটি পরিবহন করাও বেশ কঠিন। আর কেবল একটি নির্দিষ্ট মৌসুমেই ফলটি পাওয়া যায়। অসম আকৃতি এবং ওজনের কারণে এটি প্যাকেটজাত করা কঠিন। অন্যান্য ফল যেমন একই সাইজের বক্সে ভরা যায়, কাঁঠালের বেলায় সেটি সম্ভব নয়। আর বাইরে থেকে দেখে আসলে বোঝা যায় না, কোন কাঁঠাল ভালো আছে, নাকি খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে গেছে।
আর কাঁঠাল সবচেয়ে বেশি হয় দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। এটি বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার জাতীয় ফল।
এসব দেশ থেকেই মূলত কাঁঠাল রফতানি হয়, কিন্তু সেখানে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাও খুব ভালো নয়। গাছ থেকে পাড়ার পর কিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে সেটার ভালো ব্যবস্থা নেই। যার ফলে, ৭০ শতাংশ কাঁঠালই আসলে নষ্ট হয়। আবার কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বে বিমানে পণ্য পরিবহনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
এশিয়া বা দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ থেকে ফল আসে যাত্রীবাহী বিমানে। বিমান সংস্থাগুলো এখন এমন পণ্য পরিবহনে উৎসাহী যাতে অনেক বেশি ভাড়া পাওয়া যাবে। কাঁঠাল তো খুব পঁচনশীল এবং এর বাজারও তত বড় নয়। কাজেই বেশি পরিমাণে আমদানিতে এখনো লাভ নেই। এ কারণেই কাঁঠালের খুচরা বিক্রয় মূল্য এত বেশি।