বিনোদন

ক্যামেরার সামনে আমির দিয়েছিলেন কথা, ১৩ বছর পরেও রাখেননি কথা

বহু বছর আগে কিংবদন্তি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার একটি কবিতায় লিখেছিলেন, ‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখে না।’ বলিউড তারকা আমির খানের সম্পর্কেও যে এই কথাটা খেটে যাবে, সম্ভবত আশা করেননি কেউই।

ক্যামেরার সামনে জোর গলায় কথা দিয়েছিলেন, তবু কথা রাখেননি আমির খান। তবে এক্ষেত্রে তেত্রিশ নয়, এক যুগ পেরিয়ে গেলেও তার সাহায্য পৌঁছায়নি মধ্যপ্রদেশের একটি তাঁতশিল্পীর পরিবারের সদস্যেদের কাছে।

মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি অঞ্চলের প্রাণপুর গ্রাম, সেখানেই বাস ওই তাঁতশিল্লী পরিবারের। প্রায় ১৩ বছর আগে ২০০৯ সালের এক ডিসেম্বরে তাঁতশিল্পী কমলেশ কোরির বাড়িতে আচমকাই গিয়ে হাজির হন আমির খান। সৌজন্যে, তার অভিনীত ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির প্রচার।

সেই ফিল্মের প্রচারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আমির। তারই সুবাদে তাঁতশিল্পী কমলেশের বাড়িতে আচমকা হাজির হয়েছিলেন আমির এবং তার টিম। সঙ্গে ছিলেন ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির নায়িকা কারিনা কাপুর। কমলেশের একচালা মাটির বাড়িতেই চলত তাঁত। সেই তাঁতে বোনা কাপড়েই চলত তার সংসার।

সেসব দেখে কমলেশের ঘরের মেঝেতে তার পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে মাদুরে বসে আঙুল চেটেপুটে খাবার খেয়েছিলেন আমির-কারিনা। কমলেশের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দুটি শাড়িও কিনেছিলেন আমির। তার মধ্যে থেকে একটি কারিনাকে তৎক্ষণাৎ উপহারও দিয়েছিলেন।

এখানেই শেষ নয়। কমলেশের উদ্দেশে ভেসে এসেছিল একটি আমিরি-প্রতিশ্রুতি। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর নায়ক জানিয়েছিলেন, মুম্বাইয়ে একটি শোরুম তিনি কমলেশের জন্য খুলে দেবেন। যেখান থেকে নিজের তাঁতে বোনা কাপড় বিক্রি করতে পারবেন কমলেশ ও তার গ্রামের বাকি তাঁত শিল্পীরা। প্রয়োজন হলে তারা নিজেদের শোরুমে আমির এবং কারিনার নামও ব্যবহার করতে পারেন।

সব শুনে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন ওই তাঁতশিল্পী। এরপর কমলেসকে আলিঙ্গন করে ‘এ কে’ আদ্যক্ষর খোদাই করা একটি সোনার আংটি উপহার দেন আমির। দিয়েছিলেন নিজের ফোন নম্বরও। সঙ্গে মুম্বাইতে ‘থ্রি ইডিয়টস’ প্রিমিয়ারে আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন কমলেশ ও তাঁর গোটা পরিবারকে।

এরপর গঙ্গা-যমুনা থেকে জল গড়িয়েছে অনেকটাই। লকডাউনে আরও বহু মানুষের মতো কাজ হারিয়েছিলেন কমলেশ। এরপর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও যান তিনি। বর্তমানে অর্থাভাবে কমলেশের ছেলেমেয়েকে স্কুল ছাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তার স্ত্রী কমলা। তিনি নিজে তাঁত বুনতে পারেন না বলে বিড়ি বেঁধে সংসার চালাচ্ছেন।

কথাপ্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, শোরুম করে দেওয়া তো দূরের কথা, আমিরের দেওয়া ওই ফোন নম্বরে কল করলে কেউ ধরেনি। কোনো অর্থ সাহায্য আসেনি। একবার বাধ্য হয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে আমির খানকে চিঠিও লিখেছিলেন তারা। সেই চিঠিরও জবাব আসেনি আজ পর্যন্ত।

তবে এত অভাবেও বলিউড তারকার দেওয়া সেই সোনার আংটি আজও বিক্রি করেননি কমলা। এই দুর্দিনেও সযত্নে সেটি বাঁচিয়ে রেখে দিয়েছেন তিনি। আমিরের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কমলেশের পরিবারের এই দুরাবস্থার কথা কি তার কানে গেছে? উত্তর অজানান।

Back to top button