হিন্দির চেয়ে বাংলা গানের প্রতি বেশি মায়া ছিল লতা মঙ্গেশকরের
শৈশব থেকেই গুনগুন করে লতা মঙ্গেশকরের গান গাইতেন হৈমন্তী শুক্লা। তিনি একা নন, তাঁর সমসাময়িক অনেক শিল্পীই লতাকে অনুকরণ করে বেড়ে উঠেছেন। সেটা অকপটই স্বীকার করেছেন হৈমন্তী। কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন এই শিল্পী।
হিন্দির চেয়ে তাঁর গাওয়া বাংলা গানগুলোর প্রতি আমার বেশি মায়া। যখন থেকে তিনি বাংলা গান গাইতে শুরু করেন, তখন থেকেই। মনে পড়ে, ‘বাঘিনী’, ‘মন নিয়ে’র মতো সিনেমায় তাঁর গানগুলো হিট হয়েছিল। আমি তখন সেসব গান গাইতাম।
আমার কণ্ঠে গানগুলো শুনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘তুই এই গানগুলো গাইছিস কেন?’ আমিও অকপট সে কথাই বলেছিলাম যে তাঁর হিন্দি গানের চেয়ে বাংলা গানের প্রতি আমার বেশি দরদ। তাঁর গাওয়া হিন্দি গানগুলো গাইলেও, বাংলা গানেই আমার মন পড়ে থাকত।
যাঁর গান এত গেয়েছি, সেই লতা দিদির সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। একবার তিনি অনুষ্ঠান করতে কলকাতায় এসেছিলেন। উঠেছিলেন গ্র্যান্ড হোটেলে। সুপ্রকাশ গড়গড়ি ফোন করে জানালেন, লতাজি আমাকে ডেকেছেন। তিনি কয়েকটি বাংলা গানের কথা ভুলে গেছেন।
আমার সব গান মুখস্থ জেনেই সহযোগিতার জন্য ডেকেছেন। সঙ্গে সঙ্গে সেদিন ছুটে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি একটা ব্রিফকেসের ভেতর তাঁর মোটা মোটা গানের খাতা। কয়েকটি বাংলা গান তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। আমাকে বসিয়ে সেগুলো শুনে নতুন করে খাতায় তুলে নিলেন।
দেখা হওয়ার প্রথম দিনই তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে গাইতে অনুরোধ করলেন। তারপর হঠাৎ জানতে চাইলেন, ‘শুক্লা কি বাঙালি পদবি?’ আমি বলেছিলাম, ‘আমার জন্ম, কর্ম সবই বাংলায়। আমি বাঙালি। তবে আমার বাবার দেশ উত্তর প্রদেশ, লক্ষ্ণৌ।’ শুনেই তিনি বললেন, সে কারণেই নাকি আমার কণ্ঠ এত মধুর। আমি অবশ্য বিনয়ের সঙ্গেই প্রতিবাদ করেছিলাম। বলেছিলাম, বাঙালি কি তবে সুরেলা কণ্ঠে গাইতে পারে না?
পরেও বেশ কয়েকবার আমাদের দেখা হয়েছিল। দুর্গাপুরে একবার আয়োজন করা হলো ‘লতা মঙ্গেশকর নাইট’। সেখানে আমরা বাংলার শিল্পীরাও গিয়েছিলাম। তিনি গাওয়ার পর আমরা গাইব। তিনি কিংবদন্তি শিল্পী। কিন্তু মঞ্চে ওঠার আগে নার্ভাস হয়ে পড়তেন তখনো।
একটি গান গাওয়ার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হৈমন্তী, ঠিকঠাক গেয়েছি তো?’ শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিতে তাঁর গাওয়া একটি বিখ্যাত গান ছিল। সেটি গাওয়ার সময় সেদিন লতা দিদি আয়োজকদের দিয়ে আমাকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, ‘আমার এই গানে তুমি কোরাস গাইবে?’ অন্য কোনো শিল্পী অনুরোধ করলে রাজি হতাম কি না সন্দেহ আছে। জীবন্ত দেবী সরস্বতীর সঙ্গে এক মঞ্চে ওঠার সুযোগ সেদিন আমি ছাড়িনি।’