অফবিট

কলকাতার কাছেই ‘বাবা বেকারেশ্বর’-এর মন্দির। বাবার কৃপায় মেলে চাকরি!

এই বাবা সাধারণ শিব ঠাকুর নন। কোনও পুরাকাহিনিও নেই এই মন্দির নিয়ে। ‘বাবা বেকারেশ্বর’ হলেন বেকারদের দেবতা। তাঁদের দ্বারাই স্থাপিত, তাঁদের দ্বারাই পূজিত। হাওড়া থেকে মাত্র ৫টি স্টেশন দূরে এই মন্দির। হাওড়ার পরে লিলুয়া, বেলুড়, বালি, উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর। এক সময়ে যে শহর অ্যাম্বাস্যাডর গাড়ির কারখানার জন্য বিখ্যাত ছিল, সেই হিন্দমোটর শহর। রেল লাইনের যে পারে কঙ্কালসার কারখানাটি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার ঠিক উল্টো দিকে অর্থাৎ গঙ্গার দিকে গেলেই এই মন্দিরের খোঁজ পাওয়া যাবে।

খুব প্রাচীন না হলেও একেবারে নতুন নয়। মন্দিরটির বয়স প্রায় পঞ্চাশ বছর। এই ‘দেবতার জন্ম’ নিয়ে এক দারুণ মজার গল্প রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন বেকার যুবক গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে একটি ভারী পাথর কুড়িয়ে আনেন। তারপরে শিবরাম চক্রবর্তীর গল্পের মতোই খেলার ছলে জন্ম নেন দেবতা। প্রথমে একটি খেজুর গাছের নীচে নতুন দেবতা স্থান পান। তখন নাম হয়— ‘বাবা খেজুরেশ্বর’। পরে দেবতার নাম ও স্থান দুই-ই বদলে যায়। পাকা মন্দিরে স্থান করে নেন ‘বাবা বেকারেশ্বর।’ শুরু হয় নিত্যপুজো।

আসল গল্প এখনও বলা হয়নি। নামেই বোঝা যাচ্ছে এই দেবতার সঙ্গে বেকার, মানে রোজগারহীনদের একটা সম্পর্ক রয়েছে। সত্যিই তাই। বাবার মূল ভক্ত বেকার, কর্মহীন যুবকেরা। তবে বাবার পরিচিতি কম হওয়াতে ভক্তরাও স্থানীয়। আর স্থানীয়ভাবে বিশ্বাস, বাবা বেকারদের কাজের সুযোগ করে দেন। সেই বিশ্বাসের হাতে গরম উদাহরণও পাওয়া যাবে।

বাবার মন্দিরের একেবারে পাসেই একটি চায়ের দোকান রয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই দোকানটির কোনও নির্দিষ্ট মালিক নেই। দোকানটি সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেটাও বারবার বদলে যায়। তবে যিনি দায়িত্ব পাবেন তাঁর একটা গুণ থাকতেই হবে। তাঁকে বেকার হতে হবে। তিনি চাকরি বা অন্যত্র কাজ পেয়ে গেলেই দোকানের দায়িত্ব তাঁর উপরে থাকবে না। তিনি কোনও ব্যবসা শুরু করলেও আর চায়ের দোকান সামলাতে পারবেন না। পাড়ার নতুন বেকার হবেন দোকানের নতুন মালিক। গত প্রায় ৫০ বছর ধরে ‘বাবা বেকারেশ্বর’ মন্দিরের পাশের চায়ের দোকান সামলানোর দায়িত্ব যেই পান তাঁর ঠিক কাজ জুটে যায়। ফলে বারে বারে দায়িত্ব বদলে যায়। বেকার থেকে সকার হলেই সরে গিয়ে নতুন দায়িত্ব নিতে চলে আসেন অন্য এক বেকার। ট্র্যাডিশন চলছে। কোনও ছেদ নেই।

স্থানীয় বেকারদের মধ্যে বাবার মাহাত্ম্যের খ্যাতি কিছু কম নয়। অনেকেই যে চায়ের দোকান সামলাতে এসে অন্যত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।

একদিন ঘুরে আসতে পারেন বাবার মন্দির থেকে। পাশের ওই দোকান থেকে এক কাপ চা কিনে খেতেই পারেন। সে তো ‘বাবা বেকারেশ্বর’-এরই প্রসাদ।

Back to top button