হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন! জেনেনিন এক্ষুনি
শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো হার্ট বা হৃদপিণ্ড। এই অঙ্গটিকে সুস্থ রাখার জন্য আমরা নিয়মিত হাঁটাহাটি বা ব্যায়াম করে থাকি এবং খাবার-দাবারও রাখি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু খাবার-দাবার নিয়ন্ত্রণে রাখলেই কি কাজ হবে? জানতে হবে কোন কোন খাবার হার্টের জন্য ভালো নয়। সেই সব খাবার থেকে নিজেকে রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে।
হার্টের জন্য ভালো নয় এমন ১০টি খাবারের কথা জেনে নেওয়া যাক-
চিংড়ি
ক্যালোরি এবং ফ্যাট কম থাকলেও চিংড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণ কোলেস্টেরল। যা হৃদরোগের কারণ। দেখা গেছে, সাড়ে তিন আউন্স ওজনের একপিস রান্না করা স্যামন মাছে যেখানে মাত্র ৬২ মিগ্রা কোলেস্টেরল, সেখানে একই পরিমাণ চিংড়ি মাছে পাওয়া গেছে ১৮৯ মিগ্রা কোলেস্টেরল।
কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা
কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা– এই অংশগুলোতে বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে। তাই যাদের হৃদরোগের আশঙ্কা আছে তাদের কলিজা, মগজ বা নেহারি জাতীয় খাবার বর্জন করা উচিত।
কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, আইসক্রিম
এই প্রতিটি খাবারই চিনিযুক্ত। আর চিনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিষ্টিজাতীয় পানীয় ব্লাড প্রেশারকে বাড়িয়ে দেয়। আর বাড়িয়ে দেয় লিভারের তৎপরতা, যা রক্তে ক্ষতিকর ফ্যাট নিঃসরণ করে। আর এ দুটো কারণই হৃদরোগের নেপথ্য অনুঘটক।
রেড মিট
গরু, খাসি, মহিষ, খাসি ও হাঁসের মাংসকে বলা হয় রেডমিট। এই রেডমিটের ফ্যাট বা কোলেস্টেরল হৃদরোগের কারণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রেডমিট ভেঙে কারনিটাইন নামে একটি যৌগ দেহে তৈরি হয়, যা ট্রিমাথাইলেমাইন এন অক্সাইড নিঃসরণ করে। আর এথেরোসক্লেরোসিস বা আর্টারিতে ব্লক সৃষ্টিতে এই ট্রিমাথাইলেমাইনের একটা সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।
অতিরিক্ত ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার
ডিপ ফ্রাই খাবার মুখরোচক হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু জানেন কি, খাবার যত ভাজা হয়, তার খাদ্যমান তত কমতে থাকে, তত যুক্ত হতে থাকে ক্ষতিকারক ফ্যাট? মাংস বা কোনো কিছু ভাজার সময় দেখবেন তেলের মধ্যে প্রচুর বুদবুদ উঠছে। এর কারণ হলো খাবারের ভেতরে যে জল আছে, তেলে ছেড়ে দেয়ার ফলে তা বেরিয়ে আসছে এবং তেলের তাপ ও চাপে তা শুকোতে শুরু করেছে। ডিপ ফ্রাই হতে হতে জল যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, বুদবুদ ওঠাও তখন বন্ধ হয়ে যায়। খাবারের ভেতরে জলের বদলে তখন ঢুকে যায় তেল। এমনিতেই মাংস বা এই জাতীয় খাবারগুলোতে আছে স্যাচারেটেড ফ্যাট, তার ওপর তেল যুক্ত হয়ে ফ্যাটের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।
নারিকেল
হংকং আর সিঙ্গাপুরের দুটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যত লোক হংকংয়ে মারা গেছে, তার অন্তত তিনগুণ বেশি মানুষ মারা গেছে সিঙ্গাপুরে। গবেষকদের মতে, এর একটি কারণ হলো, সিঙ্গাপুরের অধিবাসীরা খাবারে নারিকেল ও পাম তেল ব্যবহার করতো। নারিকেল তেলের ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হৃদরোগীদের জন্যে ক্ষতিকর।
ঘি-মাখন-ডালডা
প্রাচ্যের অভিজাত খাবারের তালিকায় ঘি-মাখন এক অনিবার্য অনুষঙ্গ হলেও এতে আছে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট। সেই সঙ্গে আছে পালমিটিক এসিড, যা আর্টারি ব্লকের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানী ওয়াহিদা কর্মালি। এর বদলে অলিভ অয়েল, সান ফ্লাওয়ার অয়েল বা মার্জারিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডিমের কুসুম
ডিমের সাদা অংশ খাওয়া গেলেও হৃদরোগীদের জন্যে ডিমের কুসুমটা এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ ডিমের কুসুমে আছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। দেখা গেছে, একটি বড় আকারের মুরগির ডিমে ১৮৬ মিলিগ্রাম পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে, তার পুরোটাই আছে কুসুমে। আর একজন হৃদরোগীর দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত নয়।
ফাস্টফুড
বার্গার, পিজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রাইড চিকেন এগুলো আছে ফাস্টফুডের কাতারে। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন জার্নালের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়মিতভাবে যারা ফাস্ট ফুড খায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মারা যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। যারা একের বেশি অর্থাৎ দুই/তিন বার খায়, তাদের হৃদরোগে আক্রান্তের ঝুঁকি ৫০ ভাগ বেশি। আর যারা সপ্তাহে চার বা তার চেয়েও বেশি বার ফাস্ট ফুড খায়, তাদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি ৮০ ভাগেরও বেশি।
মাছের মাথা-ডিম
রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয় যে উপাদানগুলো, সেই এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উৎস হলো মাছের মাথা ও ডিম।