বিনোদন

‘বর্তমান প্রজন্মের প্রায় সব অভিনেতাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার’: বিপ্লব চ্যাটার্জী

আমাদের সমাজে অপ্রিয় সত্যি কথা বলার সাহস সকলের থাকেনা। তবে এক্ষেত্রে টলিউডের ভিলেন বলে খ্যাতি পাওয়া অভিনেতা বিপ্লব চ্যাটার্জি ব্যতিক্রম। তার স্পষ্ট বক্তার স্বভাবের কারণেই সাহা অভিনেতা -অভিনেত্রী ছাড়াও ভয়ে থাকেন প্রযোজক ও পরিচালক রাও। এমনকি নতুন প্রজন্মনের অভিনেতা -অভিনেত্রীরাও তার ভয়ে থাকেন। বহু সাক্ষাৎকারেই তিনি জনাইয়ে দিয়েছেন যে বর্তমান প্রজন্মের টলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে তার পছন্দ নয় আর তিনি এই কথা বলেছেন বহুদিন বহুবার একাধিক সাক্ষাৎকারে।

সম্প্রতি ৮ জুন তার জন্মদিন গিয়েছে আর তার এই বিশেষ দিনে সাক্ষাৎকার নিয়েছে ‘দ্য ওয়াল’ নামক একটি সংবাদ মাধ্যম। আর সেই সাক্ষাতকারে অভিনেতা বর্তমান টলিউড ইন্ডাস্ট্রি ও অভিনেতাদের সম্পর্কে তার মনোভাব প্রকাশ করলেন। ৯০ এর দশকের সিনেমায় তিনি ছিলেন টলিউডের খল নায়ক। আজ তিনি দর্শকের মন জুড়ে খল নায়ক হিসেবেই বিরাজ করেন। এখনো নাকি তাকে দেখলে ভয়ে ছুতে পালন মহিলারা। দর্শকের কাছে তিনি আজ সমাদৃত হলেও তার ডাক হয়না টলিউডের কাজে।

বর্তমান প্রজন্মের নবীন অভিনেতাদের সাথে তার রয়েছে মত পার্থক্য। কারণ এখন কার সময়ের নবীন অভিনেতাদের মধ্যে অভিনয়ের তুলনায় শো অফ করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভিনেতা সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন ‘“একজন নবীন অভিনেতার সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। সে বললো আমি নতুন গাড়ি কিনেছি ইএমআই দিতে পারছিনা। কি করবো বুঝতে পারছিনা। আমি বললাম, তোমাকে নতুন গাড়িটা কিনতে কে বলেছিল? আমি নিজে দীর্ঘদিন সিরিয়াল নয়, বহু ছবিতে কাজ করে ১৫ বছর পর একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ঝরঝরে গাড়ি কিনতে পেরেছিলাম। তুমি নতুন গাড়িটা কিনতে গেলে কোন সাহসে?”

“ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনিশ্চয়তার জায়গা একটা। আজ আছে কাল নেই। তখন সে চুপ করে গিয়েছে। এদের হচ্ছে স্টেটাস সিম্বল শো অফ ষোলআনা চাই। আমাকে দেখাতে হবে। দেখাতে হলেই পা পিছলে আলুর দম হবে। স্টেটাসটাই আজকাল সব। ও দেখাচ্ছে আমিও দেখাবো। আমি একটা বড় গাড়ি নেব, সাউথ সিটির বড় হাইরাইজ ফ্ল্যাটে থাকবো। সেগুলোর ছবি ফেসবুকে দেব। রোজ খবরে হেডলাইন হবো। এইতো চলছে।”

নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন যে দু একজন ভালো অভিনেতা আছে কিন্তু বাদ বাকি যারা আছে তাদের ভবিষৎ অন্ধকার। সিরিয়ালের মান নিয়েও তিনি বলেছেন যে খুব নিম্নমানের সিরিয়াল হয় এখন। যেহেতু দর্শকদের কাছে বিকল্প নেই তাই এখনো সিরিয়াল চলছে। তিনি আরও বলেন “সিরিয়াল যেটুকু চোখে পড়ে দেখি এদের উচ্চারণ ঠিক নেই। স-স-স করে কথা বলে। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, “শেখবার আগেই এরা সব পেয়ে গিয়েছে আমাকেই শিখিয়ে দেবে”। নতুনদের প্রতি তার অভিমান, “সিনিয়র আর্টিসদের সম্মান করা আজকাল ইন্ডাস্ট্রি থেকে উঠে গিয়েছে”।

সিরিয়ালের মধ্যে গল্পের গরু যখন গাছে ওঠে তখন তার সবথেকে বেশি খারাপ লাগে। তিনি অভিযোগ করে বলেন যে সিরিয়ালে শুধু সময় বাড়ানোর চিত্র নাট্য তাছাড়া কিছু নেই। তিনি বলেন “যিনি লিখছেন পয়সা পেয়ে যাচ্ছেন। আরামে আছেন, ভালোই ব্যবসা চলছে”! তবে তিনি এই বিষয়ে চিন্তা করে খুশি যে সিরিয়ালের কারণেই এখনকার অভিনেতারা কাজ পাচ্ছেন বসে থাকতে হচ্ছে না। তবে সেই সাথে তিনি আরও জানিয়েছেন যে তাদের সময়কার বহু শিল্পী সিরিয়ালের খাতায় নাম লিখিয়েছেন অথচ এরাই টিভি সিরিয়ালকে একটা সময় প্রচুর গালাগালি করেছিল।

তবে তিনি শুধ টলিউডের কলাকুশলীদের নয় অভিযোগ করেছেন পরিচালক ও প্রযোজকদের বিরুধ্যেও। তিনি আক্ষেপ করেন যে এতো দিনের অভিনয় ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আজকাল আর তাকে পর্দায় দেখা যায় না। তাই বলে এই নিজে তার মধ্যে কাজ করার খিদে কমে গেছে। প্রবীণ এই অভিনেতা সিরিয়ালেও কাজ করার জন্য রাজি। তিনি মনে করেন যে হয়তো বর্তমান প্রজন্মের পরিচালকরা তাকে পছন্দ করেন না তাই হয়তো কাজের জন্য তাকে ডাকেন না। টলিউডের বর্তমান প্রজন্মের পরিচালক সৃজিত -শিবপ্রসাদ সম্পর্কে বলেন “ও বাবাহ! বিশাল মাপের বিরাট ডিরেক্টর ওঁরা। তারা আমার কাছে কেন আসতে যাবেন?”

বিপ্লব চাটার্জি বলেছেন “মধ্যবিত্ত জীবন যাপন মানুষ পাল্টে ফেলেছে। সবাই এখন সব বোঝে। সবাই বড়লোক। ভিতরে দেখুন ফাঁপা। খালি কলসি বাজে বেশি অবস্থা। তবে এরা খুব সাহসী। আমরা এত বড়লোকি ভাবনা ভাবতে ভয় পেতাম”।

বিপ্লব চ্যাটার্জির কথা মিলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে তিনি ভুল কিছু বলেননি। কারণ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন তারকার কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া হলফ নাম থেকে জানা যায় যে বর্তমান সময়ের অনেক তারকারই রয়েছে প্রায় কোটি টাকা ঋণ।

Back to top button